ইসলামের পাঁচটি মৌলিক স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যাকাত। যাকাত আদায় ও এর বণ্টন একদিকে যেমন গুরুত্বপূর্ণ বাধ্যতামূলক ইবাদাত, তেমনি তা সমাজ থেকে দারিদ্র্য দূর করে ন্যায় ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার কার্যকর একটি উপাদানও বটে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুসলমানদের জন্য যাকাত আদায় করা ফরজ বা অবশ্য পালনীয়কর্তব্য হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে,
“তোমরা সালাত কায়েম করো ও যাকাত আদায় করো এবং যারা রুকূ’করে তাদের সাথে রুকূ’করো।” (সূরা বাকারা হ : আয়াত ৪৩)
পবিত্র কুরআনে আরো বলা হয়েছে,
“(হে রাসূল!), আপনি তাদের সম্পদ থেকে সাদাকা (যাকাত) গ্রহণ করে তাদেরকে পূত-পবিত্র করুন এবং তাদের জন্যে (তাদের সম্পদে) প্রবৃদ্ধি ঘটান।” (সূরা তাওবা হ : ১০৩)
আল্লাহর পথে যারা ব্যয় করে তাদের সম্পদ আল্লাহ কিভাবে বৃদ্ধি করেন সে সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা কুরআনে বলেছেন,
“যারা আল্লাহর পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি বীজের মত, যা উৎপন্ন করল সাতটি শীষ, প্রতিটি শীষে রয়েছে একশ’ দানা। আর আল্লাহ যাকে চান তার জন্য বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।” (সূরাহ আল বাকারাহ: আয়াত ২৬১)
যাকাত ফরজ হওয়া সত্ত্বেও যারা যাকাত আদায় করে না তাদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (স:) বলেছেন:
“যারা যাকাত আদায় করে না তারা শেষ বিচারের দিনে দেখতে পাবে যে, তাদের সেই সব ধন-সম্পদ ভয়ঙ্কর সাপ হয়ে তাদের দেহ জড়িয়ে ধরছে। এসব বিষাক্ত সাপ তাদের দেহকে কঠিন ভাবে নিষ্পেষিত করবে, ছোবল দেবে এবং বলতে থাকবে-আমরাই তো তোমাদের আহরিত ধন-সম্পদ এবং আমরাই হলাম সেই সব রত্ন সম্ভার, যার প্রতি তোমরা এত আসক্ত ছিলে।”(সহীহ আল বুখারী)
নিসাব হলো ন্যূনতম সেই পরিমাণ সম্পদ, যা কোনো ব্যক্তির মালিকানায় এক চন্দ্র বছর পূর্ণ করার ফলে তাঁর উপর যাকাত ফরজ হয়। যাকাত প্রযোজ্য হয় এমন সম্পদ সমূহ হলোঃ নগদ টাকা, সোনা, রূপা, সব ধরনের বাণিজ্যিক পণ্য, গবাদি পশু ও নির্দিষ্ট কৃষিপণ্য। নিত্যপ্রয়োজনীয় মৌলিকচাহিদা মেটানোর পর এক চন্দ্র বছরের জন্য কমপক্ষে ৮৫ গ্রাম সোনা বা ৫৯৫ গ্রাম রূপা অথবা এর কোনো একটির সমমূল্যের নগদ অর্থ কিংবা অন্যান্য সম্পদ কোনো ব্যক্তির মালিকানায় থাকলে প্রতি যাকাত অর্থবছরে সংশ্লিষ্ট সম্পদ থেকে ২.৫% হারে যাকাত আদায় করা তাঁর উপর ফরজ।
যাকাতের অর্থ পরিশোধের বিষয়ে কুরআন মাজীদে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সূরা তাওবার ৬০ নং আয়াত অনুযায়ী যাদের মাঝে যাকাত বিতরণ করা যাবে তারা হলেন:
১. ফকীর: এরূপ গরীব মানুষ, যার বেঁচে থাকার মত খুব সামান্য সহায় সম্বল রয়েছে বা নেই।
২. মিসকীন: এমন অভাবী, যার রোজগার তার নিজের ও নির্ভরশীলদের অপরিহার্য প্রয়োজনসমূহ মেটানোর জন্য যথেষ্ট নয়।
৩. আমিলীন: প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যাকাত সংগ্রহ ও বিতরণ কাজে নিয়োজিত কমচারীবর্গ।
৪. মুয়াল্লাফাতিল কুলূব: এমন নও-মুসলিম যার ঈমান এখনও পরিপক্ক হয়নি; অথবা ইসলাম গ্রহণ করতে ইচ্ছুক এমন কোনো অমুসলিম, যাদের চিত্ত দ্বীন ইসলামের প্রতি আকর্ষিত ও উৎসাহিত করা আবশ্যক। এরূপ ব্যক্তিদের যাকাত প্রদান,করা যাবে, যাতে তারা ঈমান গ্রহণ করে এবং তাদের ঈমান পরিপক্ক হয়।
৫. রিকাব: ক্রীতদাসের দাসত্ব মোচনের জন্য মুক্তিপণ প্রদান।
৬. গারিমীন: ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধের জন্য।
৭. ফী সাবীলিল্লাহ: আল্লাহর রাস্তায় নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ, যারা ইসলামের প্রচার প্রতিষ্ঠায় সক্রিয়ভাবে নিয়োজিত; এবং
৮. ইবনুস-সাবীল: মুসাফিরের পাথেয়, অর্থাৎ-অর্থাভাবে বিদেশ-বিভূঁইয়ে আটকে-থাকা মুসাফির।
• নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিককে: যে ব্যক্তি অন্যূন ৮৫ গ্রাম সোনাবা ৫৯৫ গ্রাম রূপার অথবা সমপরিমাণ নগদ অর্থ বা সমমূল্যের অন্যান্য দ্রব্যসামগ্রী বা বাণিজ্য পণ্যের মালিক, তাকে যাকাত প্রদান করা যায় না। এরূপ ব্যক্তির যাকাত গ্রহণ নিষিদ্ধ এবং তা ব্যবহার করা হারাম। নিসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী কাউকে যাকাত দিলে যাকাত আদায় হবে না, বরং যাকাত আদায়কারীকে পুনরায় যাকাত দিতে হবে।
• নির্দিষ্ট আত্নীয়কে: ব্যক্তি তার আপন মাতা, পিতা, মাতামহ, মাতামহী, পিতামহ ও পিতামহী এবং তাদের পিতা-মাতাকে যাকাত দিতে পারবে না। তেমনিভাবে নিজের পুত্র, কন্যা, দৌহিত্র ও দৌহিত্রীগণ এবং তাদের সন্তানাদিকেও যাকাত দেওয়া যায় না। আবার স্বামী স্ত্রীকে যাকাত দিতে পারবেন না। উক্তরূপ পরিজনবর্গ ছাড়া অন্যান্য আত্নীয়-স্বজন, যথাঃ ভাই-বোন, চাচা-চাচী, মামা-মামী, ফুফা-ফুফু, খালা-খালু, শ্বশুর-শ্বাশুড়ী, চাচাতো-মামাতো-ফুফাতো ভাই-বোন, ভ্রাতুষ্পুুত্র-ভ্রাতুষ্পুত্রী প্রমুখকে যাকাত প্রদান করা যায়। এমনকি স্ত্রী তার স্বামীকেও যাকাত দিতে পারবেন।
• সেবার প্রতিদানে: কোনো ব্যক্তিকে তার কৃত সেবার জন্য প্রতিদান স্বরূপ যাকাত প্রদান করা যায় না। তেমনিভাবে শিক্ষক বা সম্পত্তি তত্ত্বাবধানকারীগণকেও যাকাত দেওয়া যায় না।কর্মচারীকে মজুরি হিসেবে: গৃহভৃত্য বা অন্য কোনো কর্মচারীকে মজুরি হিসেবে যাকাত দেওয়া যায় না। অবশ্য মজুরির অতিরিক্ত উপহার হিসেবে, এবং কোনো বিনিময় বা কৃতজ্ঞতাবোধের প্রত্যাশা ব্যতিরেকে তাদেরকে যাকাত দেওয়া যায়।
• মসজিদে: কোনো মসজিদের নির্মাণ, মেরামত বা রক্ষণাবেক্ষণের উদ্দেশ্যে যাকাত পরিশোধ করা যায় না।
• দাফন-কাফনের ব্যয় নির্বাহে: কোনো মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফনের ব্যয় নির্বাহের উদ্দেশ্যে যাকাত ব্যবহার করা যায় না। তবে মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীরা গরীব হয়ে থাকলে যাকাত গ্রহণ করতে পারবেন এবং সেই টাকা থেকে তাদের মৃত আত্নীয়ের দাফন-কাফনের জন্য খরচ করতে পারবেন।
১। যে অর্থ/সম্পদে যাকাত আসে সে অর্থ/সম্পদের ৪০ ভাগের ১ ভাগ যাকাত আদায় করা ফরয। মূল্যের আকারে নগদ টাকা দ্বারা বা তা দ্বারা কোনো আসবাবপত্র ক্রয় করে তা দ্বারাও যাকাত দেয়া যায়।
২। যাকাতের ক্ষেত্রে চন্দ্র মাসের হিসাবে বতসর ধরা হবে। যখনই কেউ নেছাব পরিমান অর্থ/সম্পদের মালিক হবে তখন থেকেই যাকাতের বতসর শুরু ধরতে হবে।
৩। সোনা রূপার মধ্যে যদি ব্রঞ্জ, রাং, দস্তা, তামা ইত্যাদি কোনো কিছুর মিশ্রণ থাকে আর সে মিশ্রণ সোনা রুপার চেয়ে কম হয়, তাহলে পুরোটাকেই সোনা রুপা ধরে যাকাতের হিসাব করা হবে-মিশ্রিত দ্রব্যের কোনো ধর্তব্য হবে না। আর যদি মিশ্রিত দ্রব্য সোনা রুপার চেয়ে অধিক হয়, তাহলে সেটাকে আর সোনা রুপা ধরা হবে না। বরং ঐ মিশ্রিত দ্রব্যই ধরা হবে।
৪। যাকাত হিসাব করার সময় অর্থাৎ, ওয়াজিব হওয়ার সময় সোনা, রুপা, ব্যবসায়িক পণ্য ইত্যাদির মুল্য ধরতে হবে তখনকার (ওয়াজিব হওয়ার সময়কার) বাজার দর হিসাবে এবং সোনা রুপা ইত্যাদি যে স্থানে রয়েছে সে স্থানের দাম ধরতে হবে।
৫। শেয়ারের মূল্য ধরার ক্ষেত্রে মাসয়ালা হল-যারা কোম্পানীর লভ্যাংশ অর্জন করার উদ্দেশ্যে নয় বরং শেয়ার ক্রয় করেছেন শেয়ার বেচা-কেনা করে লাভবান হওয়া এর উদ্দেশ্য, তারা শেয়ারের বাজার দর ধরে যাকাত হিসাব করবেন। আর শেয়ার ক্রয় করার সময় যদি মূল উদ্দেশ্য থাকে কোম্পানী থেকে লভ্যাংশ অর্জন করা এবং সাথে সাথে এ উদ্দেশ্যও থাকে যে, শেয়ারের ভাল দর বাড়লে বিক্রিয় করে দিব, তাহলে যাকাত হিসাব করার সময় শেয়ারের বাজার দরের যে অংশ যাকাতযোগ্য অর্থ/সম্পদের বিপরীতে আছে তার উপর যাকাত আসবে, অবশিষ্ট অংশের উপর যাকাত আসবে না।উদাহরন স্বরূপ শেয়ারের মার্কেট ভ্যালু (বাজার দর) ১০০ টাকা, তার মধ্যে ৬০ ভাগ কোম্পানীর বিল্ডিং, মেশিনারিজ ইত্যাদির বিপরীতে, আর ৪০ ভাগ কোম্পানীর নগদ অর্থ, কাঁচামাল ও তৈরী মালের বিপরীতে, তাহলে যাকাতের হিসাব করার সময় শেয়ারের বাজার দর অর্থাৎ, ১০০ টাকার ৬০ ভাগ বাদ যাবে। কেননা সেটা এমন অর্থ/সম্পদের বিপরীতে যার উপর যাকাত আসে না । অবশিষ্ট ৪০ ভাগের উপর যাকাত আসবে।
৬। যাকাতদাতার যে পরিমান ঋণ আছে সে পরিমাণ অর্থ বাদ দিয়ে বাকিটার যাকাত হিসাব করবে। ঋণ পরিমাণ অর্থ বাদ দিয়ে যদি যাকাতের নেছাব পূর্ণ না হয় তাহলে যাকাত ফরয হবে না। তবে হযরত মাওলানা মুফতী তাকী উছমানী সাহেব বলেছেন, যে লোন নিয়ে বাড়ি করা হয় বা যে লোন নিয়ে মিল ফ্যাক্টরী তৈরী করা হয় বা মিল ফ্যক্টরীর মেশনারীজ ক্রয় করা হয়, এমনিভাবে যেসব লোন নিয়ে এমন কাজে নিয়োগ করা হয় যার মূল্যের উপর যাকাত আসে না- যেমনঃ বাড়ি ও ফ্যক্টরী বা ফ্যক্টরীর মেশিনারিজের মূল্যের উপর যাকাত আসে না-এসব লোন যাকাতের জন্য বাধা নয় অর্থাৎ, এসব লোনের পরিমান অর্থ যাকাত থেকে বাদ দেয়া যাবে না। হাঁ যে লোন নিয়ে এমন কাজে নিয়োগ করা হয় যার উপর যাকাত আসে, যেমনঃ লোন নিয়ে ফ্যাক্টরীর কাচামাল ক্রয়, এরুপ ক্ষেত্রে এ লোন পরিমাণ অর্থ যাকাতের হিসাব থেকে বাদ যাবে। মুফতী তাকী উছমানী সাহেব তার এ মাসলাটিকে শক্তিশালী যুক্তি দ্বারা প্রমাণিত করেছেন, অতএব তার এ মতটি গ্রহন করার মধ্যেই সতর্কতা রয়েছে।
৭। কারও নিকট যাকাতদাতার টাকা পাওনা থাকলে সে পাওনা টাকার যাকাত দিতে হবে। পাওনা তিন প্রকারঃ
(ক) কাউকে নগদ টাকা ঋণ দিয়েছে কিংবা ব্যবসায়ের পণ্য বিক্রি করেছে এবং তার মূল্য বাকী রয়েছে। এরূপ পাওনা কয়েক বছর পর উসুল হলে যদি পাওনা টাকা এত পরিমান হয় যাতে যাকাত ফরয হয়, তাহলে অতীত বতসরসমুহের যাকাত দিতে হবে। যদি একত্রে উসূল না হয়-ভেঙ্গে ভেঙ্গে উসুল হয়, তাহলে ১১ তোলা রূপার মূল্য পরিমাণ হলে যাকাত দিতে হবে। এর চেয়ে কম পরিমাণ উসূল হলে তার যাকাত ওয়াজিব হবে না-তবে অল্প অল্প করে সেই পরিমাণে পৌছে গেলে তখন ওয়াজিব হবে। আর যখনই ওয়াজিব হবে তখন অতীত সকল বতসরের যাকাত দিতে হবে। আর যদি এরুপ পাওনা টাকা নেছাবের চেয়ে কম হয় তাহলে তাতে যাকাত ওয়াজেব হবে না।
(খ) নগদ টাকা ঋণ দেয়ার কারণে বা ব্যবসায়ের পণ্য বাকিতে বিক্রি করার কারণে পাওনা নয় বরং ঘরের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, কাপড়-চোপড়, চাষাবাদের গরূ ইত্যাদি বিক্রয় করেছে এবং তার মূল্য পাওনা রয়েছে, এরূপ পাওনা যদি নেছাব পরিমান হয় এবং কয়েক বছর পর উসূল হয় তাহলে ঐ কয়েক বতসরের যাকাত দিতে হবে। আর যদি ভেঙ্গে ভেঙ্গে উসুল হয় তাহলে যতক্ষণ পর্যন্ত সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্য পরিমাণ না হবে ততক্ষন যাকাত ওয়াজিব হবে না। যখন উক্ত পরিমাণ উসূল হবে তখন বিগত বতসর সমূহের যাকাত দিতে হবে।
(গ) মহরের টাকা, পুরষ্কারের টাকা, খালা তালাকের টাকা, বেতনের টাকা ইত্যাদি পাওনা থাকলে এরূপ পাওনা উসূল হওয়ার পূর্বে যাকাত ওয়াজিব হয় না। উসূল হওয়ার পর ১ বতসর মজুদ থাকলে তখন থেকে তার যাকাতের হিসাব শুরু হবে। পাওনা টাকার যাকাত সম্পর্কে উপরোল্লিখিত বিবরণ শুধু তখনই প্রযোজ্য হবে যখন এই টাকা ব্যতীত তার নিকট যাকাতযোগ্য অন্য কোনো অর্থ/সম্পদ না থাকে। আর অন্য কোনো অর্থ/সম্পদ থাকলে তার মাসলা উলামায়ে কেরাম থেকে জেনে নিবেন।
৮। যে ঋণ ফেরত পাওয়ার আশা নেই, এরূপ ঋণের উপর যাকাত ফরয হয় না। তবে পেলে বিগত সমস্ত বতসরের যাকাত দিতে হবে।
৯। যৌথ কারবারে অর্থ নিয়োজিত থাকলে যৌথভাবে পূর্ণ অর্থের যাকাত হিসাব করা হবে না বরং প্রত্যেকের অংশের আলাদা আলাদা হিসাব হবে।
১০। যেসব সোনা রূপার অলংকার স্ত্রীর মালিকানায় দিয়ে দেয়া হয় সেটাকে স্বামীর সম্পত্তি ধরে হিসাব করা হবে না বরং সেটা স্ত্রীর সম্পত্তি। আর যেসব অলংকার স্ত্রীকে শুধু ব্যবহার করতে দেয়া হয়, মালিক থাকে স্বামী, সেটা স্বামীর সম্পত্তির মধ্যে ধরে হিসাব করা হবে। আর যেগুলোর মালিকানা অস্পষ্ট রয়েছে তা স্পষ্ট করে নেয়া উচিত। যেসব অলংকার স্ত্রীর নিজস্ব সম্পদ থাকে তৈরী বা যেগুলো বাপের বাড়ি থেকে অর্জন করে, সেগুলো স্ত্রীর সম্পদ বলে গণ্য হবে। মেয়েকে যে অলংকার দেয়া হয় সেটার ক্ষেত্রেও মায়েকে মালিক বানিয়ে দেয়া হলে সেটার মালিক সে। আর শুধু ব্যবহারের উদ্দেশ্যে দেয়া হলে মেয়ে তার মালিক নয়। নাবালেগা মেয়েদের বিয়ে-শাদি উপলক্ষে তাদের নামে যে অলংকার বানিয়ে রাখা হয় বা নাবালেগা ছেলে কিংবা মেয়ের বিবাহ শাদীতে ব্যয়ের লক্ষ্যে তাদের নামে ব্যাংকে বা ব্যবসায় যে টাকা লাগানো হয় সেটার মালিক তারা। অতএব সেগুলো পিতা/মাতার সম্পত্তি বলে গণ্য হবে না এবং পিতা/মাতার যাকাতের হিসাবে সেগুলো ধরা হবে না। আর বালেগ সন্তানের নামে শুধু অলংকার তৈরী করে রাখলে বা টাকা লাগালেই তারা মালিক হয়ে যায় না যতক্ষণ না সেটা সে সন্তানের দখলে হয়। তাদের দখলে দেয়া হলে তারা মালিক, অন্যথায় সেটার মালিক পিতা/মাতা।
১১। হিসাবের চেয়ে কিছু বেশি যাকাত দিয়ে দেয়া উত্তম। যাতে কোনো রূপ কম হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে। প্রকৃতপক্ষে সেটুকু যাকাত না হলেও তাতে দানের ছওয়াব তো হবেই।
যাকাতের হিসাবে যা যোগ হবে
১. স্বর্ণের মূল্য
২. রূপার মূল্য
৩. নগদ টাকা
৪. ব্যাংকে জমা (ফিক্সড বা সাধারণ বা অন্যান্য)
৫. কাউকে প্রদত্ত ঋণ
৬. ব্যবসায়িক সম্পদ
৭. গ্রাহকদের কাছে যা পাওনা
৮. উৎপাদিত কৃষি ফসল (উদ্বৃত্ত)
৯. দীর্ঘ মেয়াদী জমানো টাকা (হজ্জ, বাড়ী, জমি, বিয়ে ইত্যাদির জন্য)
যাকাতের সম্পদ থেকে যা বিয়োগ হবে
১. নিত্য প্রয়োজনীয় সাংসারিক খরচ যা পরবর্তী বেতন/ ফসল/ ভাতা পাওয়া পর্যন্ত লাগবে
২. আগামী এক বছরে কোন ব্যক্তিকে বা ব্যাংককে প্রদেয় ঋণের টাকা
৩. ক. ব্যবসায়ীদের কাছে মাল সরবরাহকারী যা পাবে।
খ. হজ ব্যবসায়ীদের কাছে প্লেন ভাড়া, বাড়ী ভাড়া বা অন্যান্য খরচ বাবদ যা পাওনা অাছে তাও বাদ যাবে হিসাব থেকে।
মোট যাকাতযোগ্য সম্পদ থেকে যা বিয়োগ দেয়ার থাকে তা বিয়োগ করে মোট প্রদেয় যাকাতের সম্পদের ৪০ ভাগের ১ ভাগ বা ২.৫% টাকা বা সম্পদ সারা বছরে যাকাত দিতে হবে।
যাকাত বছরের যে কোন সময় আদায় করা যায়। প্রয়োজনীয় সময়ে সহযোগিতা বরং উত্তম। তবে যাকাত আদায়ের জন্য আমরা সাধারণত: রামাজান মাসকেই বেছে নিয়ে থাকি। কারণ, এ সময়ে যাকাত আদায় করলে সত্তর গুণ সাওয়াব পাওয়া যায়। লাইলাতুল কদরে হলে তো আরো অনেক বেশী। এ সময়ে হাতে নগদ টাকাও বেশী আসে, তাই যাকাত দেয়া সহজ হয়। অপর দিকে সামনে ঈদ থাকে, গরীবরাও যেন তাদের প্রাপ্য যাকাতের টাকায় সুন্দরভাবে ঈদ করতে পারে, এসব বিষয় আমাদের মাথায় থাকে। এ সবই যুক্তিসঙ্গত। এর পাশাপাশি মনে রাখতে হবে যাকাত আদায়ে যেন মানুষের কষ্ট না হয়। যাকাত প্রদানের প্রদর্শনীর কারণে স্থানে স্থানে দুর্ঘটনা, হতাহতের কথা শুনা যায়। এসব এড়িয়ে চলতে হবে। শুধু ঈদের কয়েকটা দিন তারা আনন্দে থাকুক, এতটুকুতেই সন্তুষ্ট হলে চলবে না, তারা যেন সারা বছর নিজেদের আয়ে চলতে পারে এ জন্য ক্ষুদ্র ব্যবসার কিছু ব্যবস্থা করা গেলে ভালো হয়। যদি যাকাতের একটা অংশ থেকে প্রতি বছর ২/১ জনকে স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করা যায়, তাহলেই এক সময় আরবের মতো যাকাত নেয়ার লোক পাওয়া যাবে না, পাওয়া যাবে শুধু যাকাত দেয়ার লোক।