তারা ইবাদাতের অর্থ বুঝতে অপারগ হয়ে তা আদায়ের ব্যপারে উদাসীনতা দেখিয়েছে, এমনকি অনেক বড় বড় ইবাদাতকেই তারা বর্জন করে বসেছে। আর নির্দিষ্ট সামান্য কিছু ক্রিয়াকর্মের মাঝে ইবাদাতকে সীমাবদ্ধ রাখার প্রচেষ্টা চালিয়েছে, যা শুধুমাত্র মাসজিদে আদায় হয়ে থাকে।
তাদের ধারণানুযায়ী- বাড়ী-ঘর, অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, রাস্তা-ঘাট, সাধারণ কাজ-কর্ম, রাজনীতি ইত্যাদিতে ইবাদাতের কোন সুযােগ নেই। আর এটাই হল ধর্ম নিরপেক্ষতা, যা মানুষের ধর্মকে তার জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। | হ্যাঁ মাসজিদের আলাদা মর্যাদা রয়েছে। সেখানে গিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করা অবশ্যই অপরিহার্য। কিন্তু ইবাদাত’ শব্দটি একজন মুসলিমের জীবনের প্রতিটি কাজকেই অন্তর্ভূক্ত করে চাই তা মাসজিদের ভিতরে হােক বা বাহিরে। কেননা, ইবাদাত বা আল্লাহর দাসত্ব শুধু নির্দিষ্ট সময় বা স্থানেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং তা একজন মুসলিমের জবীনের প্রতিটি সময় ও প্রতিটি ক্ষেত্রে বাস্তবায়িত হওয়া একান্ত প্রয়ােজন। একথার দালীল হল- আল্লাহর বাণীঃ
قُلۡ اِنَّ صَلَاتِیۡ وَ نُسُکِیۡ وَ مَحۡیَایَ وَ مَمَاتِیۡ لِلّٰہِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۱۶۲﴾ۙ
“বলুন আমার ছালাত, আমার কুরবানী এবং আমার জীবন ও মরণ- সব কিছুই একমাত্র আল্লাহ্ তায়ালার জন্যে।”- সূরা আন্ আম -১৬২
তারা ইবাদাত আদায়ের ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ী করেছে। এমন কি মুস্তাহাব বিষয়গুলােকে ওয়াজিবের পর্যায়ে নিয়ে গেছে, কতক মুবাহ বিষয়কে হারাম ঘােষণা করেছে, কেহ যদি তাদের নীতিমালা বা চিন্তাধারার বিরােধিতা করে বা তা ভুল সাব্যস্ত করে তবে তাকে বিভ্রান্ত বা পথভ্রষ্ট বলে স্থির করেছে। আর এটাই হলাে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ী । যে সম্পর্কে আল্লাহ সতর্ক করেছেন। তিনি বলেনঃ
يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لاَ تَغْلُواْ فِي دِينِكُمْ وَلاَ تَقُولُواْ عَلَى اللّهِ إِلاَّ الْحَقِّ
“হে আহলে কিতাবগণ, দ্বীনের ব্যপারে তােমরা কোন প্রকার বাড়াবাড়ি করােনা এবং আল্লাহর শানে নিতান্ত সঙ্গত বিষয় ছাড়া কোন কথা বলো না। ...” (সূরা নিসা: ১৭১)
আর এটা থেকে নাবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর উম্মাতদেরকে সতর্কও করেছেন, তিনি (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
وَإِيَّاكُمْ وَالْغُلُوَّ فِي الدِّينِ فَإِنَّمَا أَهْلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمُ الْغُلُوُّ فِي الدِّينِ
“সাবধান, তােমরা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ী করা থেকে সতর্ক হও। কেননা, তােমাদের পূর্ববর্তীদেরকে এই “বাড়াবাড়িই” ধবংস করেছে।”- [ছহীহ] নাসাঈ, অধ্যায়: হাজ্জ্ব, অনুচ্ছেদ: কঙ্কর কুড়ানাে। হা/ ৩০০৭। ইবনু মাজাহ্, অধ্যায়: হাজ্জ্ব, অনুচ্ছেদ: কঙ্করের বর্ণনা, হা/ ৩০২০। দ্র: ছহীহুল জামে হা/ ২৬৮০, সিলসিলা ছহীহা, হা/ ১২৮৩]
তিনি (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরও বলেছেনঃ
هلك المتنطعون
“অতিরঞ্জনকারীগণ ধ্বংস হােক।” কথাটি তিনবার বলেছেন।
- [ছহীহ মুসলিম, অধ্যায়: বিদ্যা, অনুচ্ছেদ: অতিরঞ্জনকারীগণ ধ্বংস হােক। হা/ ৪৮২৩] আরও দেখুন [ছহীহ মুসলিম, অধ্যায়: জুম’আ, অনুচ্ছেদ: ছালাত ও খুতবা সংক্ষেপ করা। হা/ ১৪৩৫]
রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় খুতবায় একটি কথা বার বার উচ্চারণ করতেন। তা জাবের বিন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বলছেন:كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا خَطَبَ احْمَرَّتْ عَيْنَاهُ وَعَلَا صَوْتُهُ وَاشْتَدَّ غَضَبُهُ حَتَّى كَأَنَّهُ مُنْذِرُ جَيْشٍ يَقُولُ صَبَّحَكُمْ وَمَسَّاكُمْ وَيَقُولُ بُعِثْتُ أَنَا وَالسَّاعَةُ كَهَاتَيْنِ وَيَقْرُنُ بَيْنَ إِصْبَعَيْهِ السَّبَّابَةِ وَالْوُسْطَى وَيَقُولُ أَمَّا بَعْدُ فَإِنَّ خَيْرَ الْحَدِيثِ كِتَابُ اللَّهِ وَخَيْرُ الْهُدَى هُدَى مُحَمَّدٍ وَشَرُّ الْأُمُورِ مُحْدَثَاتُهَا وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ
“রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন বক্তৃতা করতেন, তখন তাঁর চক্ষু যুগল রক্তিম হয়ে উঠত, কন্ঠস্বর উঁচু হতো, ক্রোধ বৃদ্ধি পেত, যেন তিনি একটি সৈন্য বাহিনীকে সতর্ক করছেন। বলছেন, সকালে তোমাদের উপর আক্রমণ হবে, সন্ধ্যায় তোমাদের উপর আক্রমণ হবে। আর তিনি আরো বলতেন, আমি এবং ক্বিয়ামত এরকম পাশাপাশি প্রেরিত হয়েছি। একথা বলে তিনি তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুল দু’টি একত্রিত করলেন। তারপর সর্বোত্তম কথা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব, আর সর্বত্তোম, হেদায়াত হচ্ছে মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হেদায়াত, আর সবচাইতে নিকৃষ্ট ব্যাপার হল এই হেদায়াতের মাঝে নতুন কিছু সৃষ্টি করা, আর প্রত্যেক বিদ'আত হল ভ্রষ্টতা...-([ছহীহ] মুসলিম, অধ্যায়: জুম’আ, অনুচ্ছেদ: ছালাত ও খুতবা সংক্ষেপ করা। হা/ ১৪৩৫।)
এ হাদীছে বুঝানো হয়েছে- দ্বীনের নামে কুরআন ও সহীহ্ সুন্নার খেলাফ যা কিছু আছে সবই বাড়াবাড়ি এবং বিদ'আত।
শরিয়ত সম্মত ইবাদাত সমুহ আদায়ের সঠিক নীতিমালশরিয়ত সম্মত ইবাদাত সমুহ আদায়ের সঠিক নীতিমালা হল শিথিলতা ও অলসতা এবং কঠোরতা ও বাড়াবাড়ির মধ্যবর্তী স্থান। একেই মধ্যমপন্থা বলে। অর্থাৎ যাবতীয় ইবাদাতের উপর এমন ধারায় অটল থাকা যা বাড়াবাড়ি এবং শিথিলতার মধ্যবর্তি স্থানে অবস্থান।
আল্লাহ তালা বলেনঃ
فَاسْتَقِمْ كَمَا أُمِرْتَ وَمَنْ تَابَ مَعَكَ وَلَا تَطْغَوْا إِنَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ
‘‘সুতরাং (হে পয়গম্বর) তুমি ও তোমার সঙ্গে যারা তাওবা করেছে, সবাই যেভাবে তুমি আাদিষ্ট হয়েছো সেভাবেই সোজা পথের উপর অটল থাকো এবং সীমালংঘন করো না। তোমরা যা কর নিশ্চয়ই তিনি তার দ্রষ্টা’’। (সুরা হুদ :১১২)