তাওহীদ অর্থ এককত্ত্ব।
তাওহীদ হলাে - ইবাদাতের ক্ষেত্রে আল্লাহকে একক করা বা সকল ইবাদাত কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট করা।
আরেকভাবে বলা যায় যে, তাওহীদ হলো একথা বিশ্বাস করা যে, আল্লাহই একমাত্র সত্য মা’বূদ, তাঁর কোন শরীক নেই, তাঁর কোন সমকক্ষ নেই। আর এটাই রাসূলগণের দ্বীন, যা দিয়ে আল্লাহ্ তা'আলা তাদেরকে প্রেরণ করেছিলেন।
দালীলঃ
আল্লাহ্ বলেনঃ
وَلَـقَدۡ بَعَثۡنَا فِىۡ كُلِّ اُمَّةٍ رَّسُوۡلًا اَنِ اعۡبُدُوا اللّٰهَ وَاجۡتَنِبُوا الطَّاغُوۡتَ
“এবং প্রত্যেক জাতির নিকট আমরা একজন করে রাসুল (দূত) প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তােমরা আল্লাহর ইবাদাত কর এবং তাগূত থেকে দূরে থাক।”- সূরা নাহাল-৩৬
মু’মিনের জীবনে তাওহীদের গুরুত্ব
জ্বীন-ইনসান তথা সমগ্র বিশ্ব সৃষ্টির উদ্দেশ্যই হল এই ‘তাওহীদ’ বাস্তবায়ন করা। মহান আল্লাহ বলেনঃ
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُون
আর জ্বীন ও মানুষকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে তারা আমার ইবাদাত করবে। (সূরা যারিয়াত:৫৬ )“ইল্লা লি ইয়া'বুদূন” মানে 'ইল্লা লি ইয়ুওয়াহহিদূন।' তারা কেবল আমারই ইবাদাত করবে এর অর্থ তাফসীরে বাগাবী তে বলা হয়েছে যে তারা শুধু আমার তাওহীদ বাস্তবায়ন করবে।
আদম ('আলাইহিস সালাম) থেকে মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পর্যন্ত যত নাবী-রাসূল পৃথীবিতে আগমন করেছিলেন, তাঁদের সকলকে তাওহীদ প্রতিষ্ঠার এক ও অভিন্ন দায়ীত্ব দিয়েই দুনিয়াতে প্রেরণ করা হয়েছিল। এরশাদ হচ্ وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُونِ
“আমি তোমার পূর্বে যত রাসূল প্রেরণ করেছি তাদের সকলকে আমি এই ওহীই করেছি যে, আমি ব্যতীত প্রকৃত আর কোন ইলাহ নেই, কাজেই তোমরা আমারই ইবাদাত কর।” (সূরা আম্বিয়া/২৫, আরো দেখুন সূরা নাহাল: ৩৬)
এমনকি মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নবুওত লাভের পর থেকে এক টানা ১০ বছর শুধুমাত্র তাওহীদের দাওয়াত দিয়ে গেছেন, পরবর্তীতে তাওহীদের বাস্তবায়ন স্বরুপ পর্যায় ক্রমে সলাত ছিয়াম ইত্যাদির বিধান নাযিল করাতাওহীদবাদীরাই শুধু রাসূল (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর শাফায়াত পাবেন, কোন শির্ককারী তাঁর শাফায়াত পাবে নাএক সাহাবীর প্রশ্নের উত্তরে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃأَسْعَدُ النَّاسِ بِشَفَاعَتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَنْ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ خَالِصًا مِنْ قَلْبِهِ أَوْ نَفْسِهِ
“যে ব্যক্তি অন্তর থেকে ইখলাসের সাথে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পাঠ করবে কিয়ামাতের দিন সে ব্যক্তি আমার শাফায়াত লাভে ধন্য হবে।” (বুখারী:৯৯তাওহীদ ঠিক থাকলে সব গুনাহ মাফ হওয়ার আশা করা যায়।
রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলছেনে: আল্লাহ তা'আলা বলেন: يَا ابْنَ آدَمَ! إنَّك لَوْ أتَيْتنِي بِقُرَابِ الْأَرْضِ خَطَايَا ثُمَّ لَقِيتنِي لَا تُشْرِكُ بِي شَيْئًا لَأَتَيْتُك بِقُرَابِهَا مَغْفِرَةً
“হে আদম সন্তান! যদি তুমি পৃথিবী পরিমান গুনাহ্ নিয়ে আমার কাছে আসো এবং আমার সঙ্গে কোন কিছুকে শরীক না করে সাক্ষাত কর, তাহলে আমি সমপরমিাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার সঙ্গে সাক্ষাত করবো।” -(তরিমযিী নং-৩৫৪০)
তাওহীদের উপর টিকে থাকতে পারলে তার জন্য দু’টি পুরষ্কার:
১। সার্বিক নিরাপত্তা এবং
২। সঠিক পথ লাভের নিশ্চয়তা।
মহান আল্লাহর বাণীঃ
الَّذِينَ آمَنُوا وَلَمْ يَلْبِسُوا إِيمَانَهُمْ بِظُلْمٍ أُولَئِكَ لَهُمُ الْأَمْنُ وَهُمْ مُهْتَدُونَ
“যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের ঈমানের সাথে জুলুম (র্শিক)-কে মিশ্রিত করেনি, তাদের জন্য নিরাপত্তা এবং তারাই সঠিক পথ প্রাপ্ত।” ( সূরা আনআম: ৮২ )
রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলছেনেঃ مَا مِنْ أَحَدٍ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ صِدْقًا مِنْ قَلْبِهِ ، إِلَّا حَرَّمَهُ اللَّهُ عَلَى النَّارِ
“যে ব্যক্তি অন্তর থেকে সত্য মনে এই সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন ইলাহ নাই মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসুল- আল্লাহ তা'আলা তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দিবেন।” (বুখারী-মুসলিম)সাহাবী উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেছেন,
من شهد أن لا اله إلا الله وحده لا شريك له وأن محمدا عبده ورسوله وأن عيسى عبد الله ورسوله وكلمته ألقاها إلى مريم وروح منه، والجتة حق والنار حق أدخله الله الجنة على ما كان من العمل.
“যে ব্যক্তি এ সাক্ষ্য দান করল যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি একক। তাঁর কোন শরিক নেই। মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বান্দা ও রাসূল। ঈসা ('আলাইহিস সালাম) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। তিনি তাঁর এমন এক কালিমা যা তিনি মারিয়াম ('আলাইহাস সালাম) এর প্রতি প্রেরণ করেছেন এবং তিনি তাঁরই পক্ষ থেকে প্রেরিত রুহ বা আত্মা। জান্নাত সত্য জাহান্নাম সত্য। সে ব্যক্তিকে আল্লাহ তা'আলা জান্নাত দান করবেন, তার 'আমাল যাই হোক না কেন।” (বুখারি ও মুসলিম)রাসুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “আমার সামনে জিব্রাঈল ('আলাইহিস সালাম) আবির্ভূত হলেন। তিনি বললেন, আপনি আপনার উম্মাতদের সুসংবাদ দিন, যে ব্যাক্তি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক না করা অবস্থায় মারা যাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আমি বললাম, যদিও সে যিনা করে এবং যদিও সে চুরি করে থাকে? তিনি বললেন: যদিও সে যিনা করে এবং যদিও সে চুরি করে থাকে। (সহীহ্ বুখারি :১২৩৭,মুসলিম:৯৪)
সাহাবী ইতবানের হাদিসে বর্ণিত আছে, ইমাম বুখারি ও মুসলিম হাদিসটি সংকলন করেছেন,
فإن الله حرم على النار من قال لا إله إلاالله يبتغى بذلك وجه الله
“আল্লাহ তা’আলা এমন ব্যক্তির উপর জাহান্নামের আগুন হারাম করে দিয়েছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেছে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
প্রখ্যাত সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) রাসূল (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি এরশাদ করেছেন, মূসা ('আলাইহিস সালাম) বললেন, يارب علمني شيئا أذكرك وأدعوك به قال: قل يا موسى لا إله إلا الله، قال: كل عبادك يقولون هذا؟ قال يا موسى لو أن السموات السبع وعامرهن غيري والأرضين السبع في كفة ولا إله إلاالله فى كفة مالت بهن لا إله إلا الله
“হে আমার রব, আমাকে এমন জিনিস শিক্ষা দিন যা দ্বারা আমি আপনাকে স্মরণ করবো এবং আপনাকে ডাকবো। আল্লাহ বললেন, ‘হে মূসা, তুমি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলো। মূসা বললেন, “আপনার সব বান্দাই তো এটা বলে।” তিনি বললেন, “হে মূসা, আমি ব্যতীত সপ্তাকাশে যা কিছু আছে তা, আর সাত তবক জমিন যদি এক পাল্লায় থাকে আরেক পাল্লায় যদি শুধু লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ থাকে, তাহলে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর পাল্লাই বেশী ভারী হবে।” (ইবনু হিব্বান, হাকিম)
তাওহীদের থেকে মূল্যবান মু'মিনের জীবনে আর কিছু নেই।