তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ

৩০ দিনের ৩০ টি বিষয়ের সংক্ষিপ্ত আলোচনার মাধ্যমে ইসলামকে জানা - রামাদান ২০২১
2021-04-14 09:42:14


#রামাদান 3

16/04/2021

আজকের বিষয়:

তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ

শাব্দিক বা আভিধানিক অর্থ: রুবুবিয়্যাহ মানে প্রতিপালকত্ব।



সংজ্ঞা বা পরিভাষায়

আল্লাহ্কে তাঁর কর্মসমূহে একক হিসেবে মেনে নেয়াকে বা বিশ্বাস করাকে তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ বলে। অর্থাৎ আল্লাহর যে সকল কর্ম আছে; সেগুলোর ক্ষেত্রে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে হবে যে, এই কর্মগুলো কেবল আল্লাহই করেন; আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ এগুলো করতে পারে না এবং আল্লাহকে কেউ এই ব্যপারে সাহায্যও করতে পারে না।


আল্লাহর কিছু কর্ম

আল্লাহর কয়েকটি কর্ম হচ্ছেঃ

  • সৃষ্টি করা,
  • রিযিক দেয়া,
  • লালন-পালন করা,
  • সবকিছু পরিচালনা করা,
  • বিধান দেয়া,
  • মালিকানা ও সার্বভৌমত্বের অধিকারী হওয়া,
  • হেদায়াত দান করা,
  • জীবন ও মৃত্যু দেয়া,
  • বরকত দেয়া,
  • বৃষ্টি বর্ষণ করা,
  • শস্য ফুল ফল ফসল ঘাস উদ্ভিদ উৎপাদন করা,
  • সন্তান দেয়া,
  • ভাগ্য নির্ধারণ করা,
  • কোন বিষয়ে তাওফীক দান করা ইত্যাদি।


দালীলঃ

মহান আيُدَبِّرُ الْأَمْرَ مِنَ السَّمَاءِ إِلَى الْأَرْضِ ثُمَّ يَعْرُجُ إِلَيْهِ فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ أَلْفَ سَنَةٍ مِمَّا تَعُدُّونَ

“তিনি আকাশ হতে পৃথিবী পর্যন্ত সকল বিষয় পরিচালনা করেন, অতঃপর সমস্ত কিছুই তাঁর দিকে ঊর্ধ্বগামী হয় এমন একদিনে যা তোমাদের গণনায় হাজার বছরের সমান।” সূরা আস সাজদাহ/05


তাওহীদ আর রুবূবিয়্যাহ সম্পর্কে প্রমান সহ জানার জন্য বাছাইকৃত আরও কিছু আয়াতঃ সূরা আল ফাতিহা:২, ফুসসিলাত:৩৭, রূম:৪০, লুকমান:১১, শূরা:৪৯,৫০, আল ইমরান:২৬,২৭, আ’রাফ:৫৪, আনআম:৬৩,৬৪,৬৫, যুমার:৬২, হুদ:০৬, সাজদা:০৫, ইউনূস: ৩১,৩২,৫৬, মু’মেনূন:৮৬-৮৯, রা’দ:১৬,১৭, নামাল:৫৯-৬৫, ইউনূস-৩১, সূরা মু’মিনূন-৮৮


রুবুবিয়্যাতের কিছু বৈশিষ্ট

শুধুমাত্র রুবুবিয়্যাতের স্বীকৃতি ইসলামে প্রবেশের জন্য যথেষ্ট নয়

পূর্ব যুগের কাফিরগণ এই তাওহীদের স্বীকৃতি দিয়েছিল। কিন্তু তাদের এই স্বীকৃতি ইসলাম মেনে নেয়নি। বরং রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন এবং তাদের জানমাল হালাল ঘােষণা করেছিলেন।


দালীলঃ

আল্লাوَلَـئِنۡ سَاَلۡتَهُمۡ مَّنۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضَ لَيَـقُوۡلُنَّ اللّٰهُ​ ؕ

“এবং যদি তাদেরকে প্রশ্ন করেন- কে সৃষ্টি করেছে আসমান ও জমিন? তবে অবশ্যই তারা বলবে- আল্লাহ্।”-সূরা লােকমান- ২৫, সূরা যুমার-৩৮


আল্লাহর বাণীঃ

قُلْ مَن يَرزُقُكُمْ من السماءِ والأرْضِ أمّن يملكُ السمْعَ والأبْصارَ وَ مَن يُخْرِجُ الحَيَّ مِنَ المَيِّتِ وَيُخْرِجُ المَيِّتَ مِنَ الحَيِّ وَ مَن يُدَبِّرُ الأمْرَ ، فَسَيَقُولُونَ اللهُ ، فَقُلْ أفَلا تَتَّقُونَ

“তুমি বল : তিনি কে, যিনি তোমাদেরকে আসমান ও জমিন হতে রিজিক দিয়ে থাকেন? অথবা কে তিনি, যিনি কর্ণ ও চক্ষুসমূহের উপর পূর্ণ অধিকার রাখেন? আর তিনি কে, যিনি জীবন্তকে প্রাণহীন হতে বের করেন, আর প্রাণহীনকে জীবন্ত হতে বের করেন? আর তিনি কে যিনি সমস্ত কাজ পরিচালনা করেন? তখন অবশ্যই তারা বলবে যে, আল্লাহ। অতএব, তুমি বল: তবে কেন তোমরা (শির্ক হতে) বিরত থাকছ না? ” (সূরা ইউনুস: ৩১)


আরো দেখুন আল্লাহর বাণীঃقُلْ لِّمَنِ الْاَرْضُ وَمَنْ فِيْهَاۤ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ

"বল : এ পৃথিবী আর তার ভিতরে যা আছে তা কার? (বল) যদি তোমরা জান!"

سَيَقُوْلُوْنَ لِلّٰهِ ۗ قُلْ اَفَلَا تَذَكَّرُوْنَ

"তারা বলবে- আল্লাহর। বল : তবুও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না?"

قُلْ مَنْ رَّبُّ السَّمٰوٰتِ السَّبْعِ وَرَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ

"বলঃ সাত আসমান আর মহান আরশের মালিক কে?"

سَيَقُوْلُوْنَ لِلّٰهِ ۗ قُلْ اَفَلَا تَتَّقُوْنَ

"তারা বলবেঃ (এগুলোর মালিকানা) আল্লাহর। বলঃ তবুও কি তোমরা (আল্লাহকে) ভয় করবে না?"قُلْ مَنْ بِۢيَدِهٖ مَلَكُوْتُ كُلِّ شَيْءٍ وَّهُوَ يُجِيْرُ وَلَا يُجَارُ عَلَيْهِ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ

"বলঃ সবকিছুর একচ্ছত্র কর্তৃত্ব কার হাতে? তিনি (সকল কে) আশ্রয় দেন, তাঁর উপর কোন আশ্রয় দাতা নেই, (বল) তোমরা যদি জান।سَيَقُوْلُوْنَ لِلّٰهِ ۗ قُلْ فَاَ نّٰى تُسْحَرُوْنَ

"তারা বলবে (সবকিছুর কর্তৃত্ব) আল্লাহর। তাহলে কেমন করে তোমরা যাদুগ্রস্ত হয়ে পড়ছ?"

- মু'মিনূন:84-89


তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ হচ্ছে ফিতরাতি বৈশিষ্ট তথা সৃষ্টিগত বৈশিষ্ট বা স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য
আল্লাহ তা'আলা সকল সৃষ্টি জীবকে তাওহীদ এবং স্রষ্টা প্রভুকে চিনতে পারার ফিতরাত দিয়েই সৃষ্টি করেছেন।


দালীলঃ

আল্লাহ্ তা'আলা বলেনفَاَقِمۡ وَجۡهَكَ لِلدِّيۡنِ حَنِيۡفًا ​ؕ فِطۡرَتَ اللّٰهِ الَّتِىۡ فَطَرَ النَّاسَ عَلَيۡهَا ​ؕ لَا تَبۡدِيۡلَ لِخَـلۡقِ اللّٰهِ​ ؕ

“অতঃপর তুমি একনিষ্ঠভাবে সেই ধর্মের দিকে ধাবিত হও যেটা মেনে নেয়ার ফিতরাতের উপর আল্লাহ্ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে কোন পরিবর্তন নেই।”- সূরা রূম- ৩০

সুতরাং আল্লাহর প্রভুত্বকে মেনে নেয়াটা মানুষের সৃষ্টিগতভাবে একটি স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। আর তার সাথে অন্য কিছুকে শরীক করা একটি উপস্বর্গ বা নতুন ঘটনা।


নাবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃمَا مِنْ مَوْلُودٍ إِلاَّ يُولَدُ عَلَى الْفِطْرَةِ، فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ أَوْ يُنَصِّرَانِهِ أَوْ يُمَجِّسَانِهِ، كَمَا تُنْتَجُ الْبَهِيمَةُ بَهِيمَةً جَمْعَاءَ هَلْ تُحِسُّونَ فِيهَا مِنْ جَدْعَاءَ ‏"‏‏.‏ ثُمَّ يَقُولُ أَبُو هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه – ‏(فِطۡرَتَ اللّٰہِ الَّتِیۡ فَطَرَ النَّاسَ عَلَیۡہَا ؕ لَا تَبۡدِیۡلَ لِخَلۡقِ اللّٰہِ ؕ ذٰلِکَ الدِّیۡنُ الۡقَیِّمُ ٭ۙ وَ لٰکِنَّ اَکۡثَرَ النَّاسِ لَا یَعۡلَمُوۡنَ ‏)

“প্রতিটি নবজাতকই জন্মলাভ করে ফিতরাতের উপর। এরপর তার মা-বাপ তাকে ইয়াহুদী বা খ্রিস্টান বা অগ্নিপূজারী রূপে গড়ে তোলে। যেমন, চতুষ্পদ পশু নিখুঁত বাচ্চা জন্ম দেয়। তোমরা কি তাদের মধ্যে কোন কানকাটা দেখতে পাও? (বরং মানুষেরাই তার নাক কান কেটে দিয়ে বা ছিদ্র করে তাকে বিকৃত করে থাকে। অনুরূপ ইসলামের ফিতরাতে ভূমিষ্ট সন্তানকে মা-বাপ তাদের শিক্ষা-দীক্ষা ও জীবন ধারায় প্রবাহিত করে ভ্রান্তধর্মী বানিয়ে ফেলে) পরে আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিলাওয়াত করলেন (৩০. আর-রুমঃ ৩০), “এটাই আল্লাহর প্রকৃতি, যার উপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন। এটাই সরল ধর্ম।”‏ - [ছহীহ বুখারী, অধ্যায়: তাফসীর, অনুচ্ছেদ: আল্লাহর সৃষ্টিতে কোন পরিবর্তন নেই। হা/ ৪৪০২ মুসলিম, অধ্যায়: তকদীর, অনুচ্ছেদ: প্রত্যেক সন্তান ফিতরাতের উপর জন্মলাভ করে.... একথার অর্থ । হা/ ৪৮০৩]


সুতরাং মানুষকে যদি তার ফিতরাত অনুযায়ী ছেড়ে দেয়া হয়, তাহলে সে অবশ্যই সেই তাওহীদের দিকেই ধাবিত হবে, যা নিয়ে রাসূলগণ এসেছিলেন, আসমানী কিতাব সমূহ অবতীর্ণ হয়েছিল এবং জাগতিক নিদর্শনাবলী যার সাক্ষ্য বহন করে। কিন্তু বিভ্রান্তিকর শিক্ষা এবং নাস্তিক্যবাদ পরিবেশ শিশুর মন-মগজ পরিবর্তন করে দেয়। আর সেখান থেকেই সে বিপদগামী হয় এবং ভ্রান্ত বিশ্বাস ও কুসংস্কারে পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুকরণ করে থাকে।


হাদীসে কুদসীর মধ্যে আল্লাহ্ তা'আলা এরশাদ ...وَإِنِّي خَلَقْتُ عِبَادِي حُنَفَاءَ كُلَّهُمْ وَإِنَّهُمْ أَتَتْهُمُ الشَّيَاطِينُ فَاجْتَالَتْهُمْ عَنْ دِينِهِمْ وَحَرَّمَتْ عَلَيْهِمْ مَا أَحْلَلْتُ لَهُمْ وَأَمَرَتْهُمْ أَنْ يُشْرِكُوا بِي مَا لَمْ أُنْزِلْ بِهِ سُلْطَانًا …

“নিশ্চয় আমি প্রত্যেক বান্দাকে একত্ববাদে বিশ্বাসী (ধর্মের প্রতি একনিষ্ঠ) করেই সৃষ্টি করেছি। অতঃপর শাইত্বান তাদের নিকট আসে এবং তা থেকে তাদেরকে অমনােযােগী করে দেয়। তাদের জন্য যা হালাল করেছিলাম তা হারাম করে দেয় এবং তাদেরকে নির্দেশ দেয় আমার সাথে শির্ক করার, যে ব্যাপারে আমি কোন দালীল প্রমাণ পাঠাইনি।”-(ছহীহ মুসলিম, অধ্যায়: জান্নাত এবং তার সুখ-সাচ্ছন্দ ও অধিবাসীদের বর্ণনা, অনুচ্ছেদ যে সমস্ত গুণাবলী দ্বারা দুনিয়াতে জান্নাতের অধিবাসী ও জাহান্নামের অধিবাসীদেরকে জানা যায়। হা/ ৫১০৯)।


অর্থাৎ তাদেরকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় মূর্তী পূজার দিকে এবং এক আল্লাহকে ছেড়ে দিয়ে তাদেরকে প্রভু হিসেবে মেনে নিতে। অতঃপর তারা পতিত হয় বিভ্রান্তি, বিচ্ছিন্নতা এবং মতবিরােধে। প্রত্যেকেই ইবাদাত করার জন্য একজন করে প্রভু উপাস্য তৈরী করে, যার সাথে অন্যের প্রভুর কেন সম্পর্ক থাকে না। আর এভাবেই তারা নানা প্রকার বিপর্যয়ের সম্মুখিন হয়। কেননা যখনই সত্য প্রভুকে পরিত্যাগ করে বাত্বিল প্রভু গ্রহণ করে তখনই তাকে ধ্বংস ও বিড়ম্বনায় নিপতিত হতে হয়।


রুবুবিয়্যাতের সাথে সাংঘর্ষিক শির্ক ফিতরাতি বৈশিষ্ট নয়
আল্লাহর প্রভুত্ব বা তাওহীদকে মেনে নেয়াটা মানুষের ফিতরাত বা সৃষ্টিগত বৈশিষ্ট্য । আর তার সাথে অন্য কিছুকে শরীক করা একটি ভ্রষ্টতা ও অবিচার, যা ফিতরাতের সাথে সাংঘর্ষিক।



দালীলঃ

রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ مَا مِنْ مَوْلُودٍ إِلَّا يُولَدُ عَلَى الفِطْرَةِ، فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ أَوْ يُنَصِّرَانِهِ، أَوْ يُمَجِّسَانِهِ

“প্রতিটি নবজাত শিশু ফিতরাত তথা সৃষ্টিগতভাবে প্রভুকে স্বীকার করার স্বভাবের উপর জন্ম লাভ করে। পরবর্তীতে তার পিতা-মাতা তাকে ইহুদী, খৃষ্টান বা অগ্নি পূজক বানায়।”- [ছহীহ] বুখারী, অধ্যায়: তাফসীর, অনুচ্ছেদ: আল্লাহর সৃষ্টিতে কোন পরিবর্তন নেই। (হা/ ৪৪০২ মুসলিম, অধ্যায়: তকদীর, অনুচ্ছেদ: প্রত্যেক সন্তান ফিতরাতের উপর জন্ম লাভ করে.... একথার অর্থ। হা/ ৪৮০৩)


যাবতীয় কল্যান ও অকল্যাণ আল্লাহরই পক্ষ থেকে

যাবতীয় কল্যান ও অকল্যাণ তাঁর প্রজ্ঞার আলোকে তিনিই নির্ধারণ করেন। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উপর এই ক্ষমতা আরোপ করলে তাওহীদুর রুবুবিয়াহ নষ্ট হয়ে যাবে।


দালীলঃ

মহান আল্লাহوَإِن يَمْسَسْكَ اللَّهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهُۥٓ إِلَّا هُوَ ۖ وَإِن يَمْسَسْكَ بِخَيْرٍ فَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ

“আর যদি আল্লাহ তোমাকে কোন দুর্দশা দ্বারা স্পর্শ করেন, তবে তিনি ছাড়া তা দূরকারী কেউ নেই। আর যদি কোন কল্যাণ দ্বারা স্পর্শ করেন তবে তিনিই তো সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।” - সূরা আনআম/১৭.

এ আয়াতে ইসলামের একটি মৌলিক বিশ্বাস বর্ণিত হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি লাভক্ষতির মালিক শুধুমাত্র আল্লাহ্ তা'আলা। তাঁর ইচ্ছার বাইরে কোন ব্যক্তি কারো সামান্য উপকারও করতে পারে না, ক্ষতিও করতে পারে না। আল্লাহ যদি কারও লাভ করতে চান তবে তা বন্ধ করার ক্ষমতা কারও নেই।


অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেনঃ وَإِن يَمْسَسْكَ اللَّهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهُۥٓ إِلَّا هُوَ ۖ وَإِن يُرِدْكَ بِخَيْرٍ فَلَا رَآدَّ لِفَضْلِهِۦ ۚ يُصِيبُ بِهِۦ مَن يَشَآءُ مِنْ عِبَادِهِۦ ۚ وَهُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ

“এবং আল্লাহ তোমাকে ক্লেশ দিলে তিনি ব্যতীত তা মোচনকারী আর কেউ নেই। এবং তিনি যদি তোমার মঙ্গল চান তাহলে তাঁর অনুগ্রহ রদ করারও কেউ নেই। আপন বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তিনি মঙ্গল দান করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” -সূরা ইউনুস:১০৭

এ আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে ইমাম বাগভী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণনা করেন-


একবার রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উটে সওয়ার হয়ে আমাকে পিছনে বসিয়ে নিলেন। কিছু দূর যাওয়ার পর আমার দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেনঃ “হে বৎস’! আমি আরয করলামঃ আদেশ করুন, আমি হাযির আছি। তিনি বললেনঃ يَا غُلاَمُ إِنِّي أُعَلِّمُكَ كَلِمَاتٍ احْفَظْ اللَّهَ يَحْفَظْكَ احْفَظْ اللَّهَ تَجِدْهُ تُجَاهَكَ إِذَا سَأَلْتَ فَاسْأَلْ اللَّهَ وَإِذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ وَاعْلَمْ أَنَّ الأمة لَوْ اجْتَمَعَتْ عَلَى أَنْ يَنْفَعُوكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَنْفَعُوكَ إِلاَّ بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللَّهُ لَكَ وَلَوْ اجْتَمَعُوا عَلَى أَنْ يَضُرُّوكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَضُرُّوكَ إِلاَّ بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللَّهُ عَلَيْكَ رُفِعَتْ الْأَقْلاَمُ وَجَفَّتْ الصُّحُفُ

“তুমি আল্লাহর বিধি-বিধানকে হেফাযত করবে, আল্লাহ তোমাকে হেফাযত করবেন। তুমি আল্লাহর বিধি-বিধানকে হেফাযত করো তাহলে আল্লাহকে (সাহায্যকারী হিসেবে) তোমার সামনে পাবে। কোন কিছু চাইতে হলে তুমি আল্লাহর কাছেই চাও এবং সাহায্য চাইতে হলে আল্লাহর কাছেই চাও। সমগ্র জাতি সম্মিলিতভাবে তোমার কোন উপকার করতে চাইলে যা তোমার তাকদিরে লিখা নেই তারা কখনো তা করতে পারবে না। পক্ষান্তরে যদি তারা সবাই মিলে তোমার এমন কোন ক্ষতি করতে চায়, যা তোমার ভাগ্যে নেই, তবে কখনোই তারা তা করতে সক্ষম হবে না। পাতা শুকিয়ে গেছে এবং কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে।* -(তিরমিযি, আহমাদ, আলবানী র. সহীহ্ বলেছেন)


কল্যান-অকল্যানের ব্যাপারে রুবূবিয়্যাহ নষ্টকারী কিছু কুসংস্কার

  • শিশুর কপালে কালো টিপ দিলে অকল্যাণ হয়না
  • কারো আলোচনা করার সময় সে এসে পড়লে অনেক দিন বাঁচে
  • কেউ পেছন দিক থেকে ডাক দিলে কিংবা নিজে যাত্রার সময় পিছন ফিরে তাকালে যাত্রা অশুভ হয়
  • হোচট খেলে কিংবা পেচা ডাকলে সামনে বিপদ আছে
  • রোগ ব্যাধি বা বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পেতে শরীরে পিতলের বালা, শামুক, ঝিনুকের মালা, সুতা, কিংবা যেকোন প্রকারের বস্তু লটকানো
  • সকালে বেচাকেনা না করে কোন কাষ্টমারকে বাকি দিলে কিংবা সন্ধ্যার সময় কাউকে বাকি দিলে ব্যাবসায় অমঙ্গল হয়
  • সফলতা কিংবা মঙ্গল লাভের জন্য এবং অমঙ্গল থেকে রক্ষা পেতে যে কোন প্রকার আংটি ব্যবহার করা

ইত্যাদি


কিছু পথভ্রষ্ট জাতির বিভ্রান্তিকর কল্পনার মাধ্যমে তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ নষ্টের বর্ননা

রবকে সঠিকভাবে চিনতে না পারার কারণে তথা মাবুদ সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর কল্পনার মাধ্যমে যুগে যুগে বিভিন্ন কওমের লোকেরা তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ নষ্ট করেছে। মুশরিকদের একটি দল বিশ্বাস করে যে, তাদের উপাস্যগণ জগতের কোন কোন কাজে ক্ষমতা প্রয়ােগের অধিকারী। শাইত্বান এদেরকে নিয়ে তামাশা করে। তাদের একটি দল মৃত লােকদের মূর্তী তৈরী করে, তাদেরকে সম্মানের নামে তাদের উপাসনা করতে আহবান জানায়। যেমন- নূহ ('আলাইহিস সালাম) এর সম্প্রদায়। | অপর দল বিভিন্ন গ্রহ-উপগ্রহের পূজা-অর্চনা করে। এই ধারণায় যে, পৃথিবীর উপর এগুলাের বিশেষ কোন প্রভাব রয়েছে। তাই তাদের কেহ সূর্যের ইবাদাত করে, কেউ চন্দ্রের, আর কেউবা অন্যান্য নক্ষত্ররাজীর উপাসনা করে থাকে। কেহ আবার আগুনের ইবাদাত করে, এদেরকে বলা হয় অগ্নিপূজক।

আরাে রয়েছে ফেরেস্তা, গরু, গাছ, পাথর, কবর বা মাজার ইত্যাদি সত্ত্বা বা বস্তুর পুজারী নানা দল। এদের উপাসনার মূল কারণ হলাে- তারা ধরে নিয়েছে যে, এই বস্তুগুলাের মধ্যে রুবুবিয়্যাতের কোন না কোন বৈশিষ্ট মওজুদ আছে। যেমন, পূর্বযুগ ও বর্তমানের মাজারপূজারীগণ বিশ্বাস করে যে, কবরের মৃত ব্যক্তিগণ তাদের জন্য সুপারিশকারী এবং তাদের মাধ্যমেই আল্লাহ্ তাদের যাবতীয় প্রয়ােজন পূরণ করে থাকেন। তারা বলمَا نَعۡبُدُهُمۡ اِلَّا لِيُقَرِّبُوۡنَاۤ اِلَى اللّٰهِ زُلۡفٰى ؕ

“আমরা তাে এজন্যই তাদের ইবাদাত করি, যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহ্‌র নিকটবর্তী করে দেয়।”- সূরা যুমার: ৩

যেমন আরবের কতক মুশরিক এবং খৃষ্টান সম্প্রদায় তাদের উপাস্যগণকে আল্লাহর সন্তান বলে মনে করত। আরবের মুশরিকগণ ফেরেস্তাদের উপাসনা করত এই বিশ্বাসে যে, তারা আল্লাহর কন্যা। আর খৃষ্টানগণ ঈসা ('আলাইহিস সালাম) এর উপাসনা করত এই ভেবে যে, তিনি আল্লাহর পুত্র (নাউযুবিল্লাহ)।


এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন কওমের লোকেরা যুগে যুগে মূলত তিনভাবে তাওহীদুর রুবূবিয়্যাহকে নষ্ট করেছে।

অন্যভাবে বলতে গেলে, মানুষ না বুঝে মূলত তিন শ্রেণীর সত্ত্বা বা বস্তুর উপর রুবুবিয়্যাহ আরোপ করার মাধ্যমে তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহকে নষ্ট করেছে।


১। নির্দিষ্ট আকৃতির মূর্তি

তদানীন্তন কুরাইশরা মনে করত যে, আল্লাহর কিছু কিছু কর্ম তাদের দেব-দেবী বা মূর্তিরা বাস্তবায়ন করার ক্ষমতা রাখে। এ যুগের অনেক নামধারী মুসলিম মনে করে যে, মৃত ওলী-আওলিয়া ও পীর-বুযুর্গরা আল্লাহর কিছু কিছু কর্ম বাস্তবায়নের ক্ষমতা রাখে।


২। ধরা-ছোঁয়ার বাইরে এমন কিছু মাখলুক

যেমন কুরাইশরা মনে করত যে, গ্রহ-নক্ষত্র, জ্বীন ও ফেরেশতার মধ্যে রুবুবিয়্যাতের কোন কোন বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এ যুগেও অনেক নামধারী মুসলিম মনে করে যে, গ্রহ-নক্ষত্র, জ্বীন ও ফেরেশতার মধ্যে রুবূবিয়্যাতের কোন কোন বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। যেমন, উপকার-অপকার করা, ফসল বেশী হওয়া, বৃষ্টি-অনাবৃষ্টি, রোগ-বালাই দূর করা ইত্যাদিতে তারা ভুমিকা রাখে।


৩। এমন মূর্তি, যার নির্দিষ্ট কোন আকার নেই

এমন কতিপয় জিনিসের মধ্যে তারা রুবুবিয়্যাহ আরোপ করেছিল, যেগুলোর নির্দিষ্ট কোন আকার-আকৃতি ছিল না। যেমন আগুণ, নদী, পাহাড়, গাছ, পাথর কিংবা কোন স্থান।


এযুগের কিছু বিভ্রান্তিকর কল্পনার মাধ্যমে তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ নষ্টের বর্ননা

এ যুগেও ভ্রান্ত মুসলিমদের মধ্যে পুর্বযুগের বিভ্রান্তিকর মতবাদের অন্ধ অনুসরণ দেখা যায়। যেমনঃ

  • কবর, মাজার, থান, সিমেন্টের নির্মিত স্মৃতি স্তম্ভ,
  • কোন পরহেজগার ব্যক্তির ব্যবহৃত লাঠি, গামছা, দাড়ি, পাগড়ি,
  • আগুণ, নদী, পাহাড়, সোলেমানী পাথর,
  • গাছের শিকড়, মাছের কাঁটা,
  • তাবীয, রিং, তাগা, বালা, মাজারের মাটি,
  • মাজারের আগরবাতির ছাই, ইত্যাদির মাধ্যমে তারা ভাল ভাগ্য সংগ্রহ কিংবা দুষ্ট আত্নাদের তাড়াতে চায়।


অনুরূপ, অনেক জিনিসের মধ্যে কূলক্ষণের ভিত্তিতে রুবুবিয়্যাহ আরোপ করে, যেমন,

  • হিজড়া দেখলে ক্ষতি হয়,
  • চোখের পাতা লাফালে বড় লোক হয়,
  • টিকটিকি ডাকলে এই হয়, কাক ডাকলে সেই হয়....!


এভাবে পুর্বযুগের ও বর্তমানযুগের সকলেই তাওহীদুর রুবূবিয়্যাহকে ধ্বংস করেছে। তবে এই ভ্রান্ত বিশ্বাস নিয়েই তারা বসে থাকেনি বরং এগুলোর উপাসনাও শুরু করে দিয়েছে। আর তখন তাওহীদুর রুবূবিয়্যার সাথে তাওহীদুল উলূহিয়্যাকেও ধ্বংস করে শির্কের নর্দমায় নিমজ্জিত হয়েছে।


পুর্বযগের ও বর্তমানযুগের বিভ্রান্তিকর ধারণাগুলির অপনােদন

আল্লাহ্ তা'আলা উক্ত উভয়যুগের অবান্তর চিন্তাধারার সবগুলােরই খন্ডন করেছেন।


১। মূর্তি পূজারীদের ধারনার জবাব

মূর্তী পূজারীদেরوَاتۡلُ عَلَيۡهِمۡ نَبَاَ اِبۡرٰهِيۡمَ​ۘ‏ ﴿﴾ اِذۡ قَالَ لِاَبِيۡهِ وَقَوۡمِهٖ مَا تَعۡبُدُوۡنَ‏ ﴿﴾ قَالُوۡا نَـعۡبُدُ اَصۡنَامًا فَنَظَلُّ لَهَا عٰكِفِيۡنَ‏ ﴿﴾ قَالَ هَلۡ يَسۡمَعُوۡنَكُمۡ اِذۡ تَدۡعُوۡنَۙ‏ ﴿﴾ اَوۡ يَنۡفَعُوۡنَكُمۡ اَوۡ يَضُرُّوۡنَ‏ ﴿﴾ قَالُوۡا بَلۡ وَجَدۡنَاۤ اٰبَآءَنَا كَذٰلِكَ يَفۡعَلُوۡنَ‏

“আর তাদেরকে ইব্রাহীমের বৃত্তান্ত শুনিয়ে দিন। যখন তাঁর পিতাকে এবং সম্প্রদায়কে বললেনঃ তােমরা কিসের ইবাদাত কর? তারা বললঃ প্রতিমার পূজা করি এবং সর্বদা এদেরকে নিষ্ঠার সাথে আঁকড়ে থাকি। তিনি (ইব্রাহীম 'আলাইহিস সালাম) বললেনঃ যখন তােমরা আহবান কর, তখন কি তারা তােমাদের কথা শুনে? বা তােমাদের কোন উপকার বা ক্ষতি করতে পারে? তারা জবাবে বললঃ না, তবে আমরা আমাদের পিতৃ পূরুষদেরকে পেয়েছি, তারা এরূপই করতাে।”-সূরা শাে'আরা: ৬৯-৭৪


দেখা যাচ্ছে, তারা এ কথার প্রতি একমত হয়েছে যে, প্রতিমা সমূহ তাদের কোন আহ্বান শােনার বা ভাল-মন্দ করার ক্ষমতা রাখে না। তবে তারা শুধু পূর্ব পুরুষদের তাকলীদ (অন্ধানুসরণ) করেই তাদের পুজা-অর্চনা করে থাকে। আর তাকলীদ একটি খোঁড়া দালীল।


২। চন্দ্র, সূর্য ও নক্ষত্র পূজারীদের যুক্তি খন্ডন

চন্দ্র, সূর্য ও নক্ষত্র পূজারীদের যুক্তির প্রতিবাদে মহান আল্লাহ্ বলেনঃوَمِنْ آيَاتِهِ اللَّيْلُ وَالنَّهَارُ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُ ۚ لَا تَسْجُدُوا لِلشَّمْسِ وَلَا لِلْقَمَرِ وَاسْجُدُوا لِلَّهِ الَّذِي خَلَقَهُنَّ إِنْ كُنْتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ

“এবং তাঁর নিদর্শন সমূহের মধ্যে রয়েছে দিবস-রজনী, সূর্য ও চন্দ্র। তােমরা সূর্যকে সিজদা করাে না চন্দ্রকেও না; আল্লাহকে সিজদা কর, যিনি এগুলাে সৃষ্টি করেছেন, যদি তােমরা নিষ্ঠার সাথে শুধুমাত্র তারই ইবাদাত কর।”- সূরা হা-মীম সিজদাহ্-৩৭


৩। ঈসা ('আলাইহিস সালাম) এবং ফেরেস্তাদের উপাসনার জবাব

আল্লাহ্‌র সন্তান ভেবে ঈসা ('আলাইহিস সালাম) এবং ফেরেস্তাদের উপাসনার বিরুদ্ধে আল্লাহ্ বলেনঃ

اَنّٰى يَكُوۡنُ لَهٗ وَلَدٌ وَّلَمۡ تَكُنۡ لَّهٗ صَاحِبَةٌ​ ؕ

“কিভাবে আল্লাহ্‌র সন্তান হতে পারে, অথচ তাঁর কোন সঙ্গিনী নেই?”-সূরা আনআম- ১০১

তিনি আরাে বলেনঃ

لَمۡ يَلِدۡ ۙ وَلَمۡ يُوۡلَدۡ ۙ وَلَمۡ يَكُنۡ لَّهٗ كُفُوًا اَحَدٌ‏

“তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাঁকে জন্ম দেয়নি। আর তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।”-সূরা ইখলাস-৩-৪