ইহসান মানে সুন্দরভাবে কোন কাজ করা।
ইহসান হলো, তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদাত করবে যে, তুমি যেন তাঁকে দেখছ। আর যদি তা মনে করতে না পার, তাহলে অন্তত: এতোটুকু মনে করবে (অর্থাৎ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করবে) যে, আল্লাহ তোমাকে অবশ্যই দেখছেন।
ইহসানের একটিই ভিত্তি। তা হল, এমনভাবে আল্লাহর ইবাদাত করবে, যেন তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছ। যদি তা সম্ভব না হয় তবে মনে করবে তিনি তােমাকে দেখছেন। (সূরা নাহাল: ১২৮, সূরা আশ শাে'আরা: ২১৭-২২০)
মুহসিনীনদের মধ্যে দুটি স্তর রয়েছে, যথা-
১। মুশাহাদাহ
“তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদাত করবে যে, তুমি যেন তাঁকে দেখছ”। এটি ইহসানের সব থেকে উঁচু স্তর। এই স্তরের মুহসিনগণ এমনভাবে তাদের জীবন পরিচালনা করেন, ঠিক যেন তারা আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছেন। মুশাহাদাহ মানে দেখা, প্রত্যক্ষ করা।
২। মুরাকাবাহ
“ইবাদাহর ক্ষেত্রে বিশ্বাস করবে যে, আল্লাহ তোমাকে অবশ্যই দেখছেন”। এই স্তরের মুহসিনগণ খুব দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে আমরা যা কিছু করছি আল্লাহ তা'আলা সব কিছু সুক্ষভাবে দেখছেন, গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। মুরাকাবা মানে পর্যবেক্ষণ করা, গার্ড দেয়া বা অবজার্ভ করা।
ইহসানের সমস্ত আয়াতগুলো এখানে দালীল হিসেবে প্রযোজ্য।
ইহসানের ক্ষেত্র
রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
عن أبي يعلى شداد بن أوس ، عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : إن الله كتب الإحسان على كل شيء ، فإذا قتلتم فأحسنوا القتلة ، وإذا ذبحتم فأحسنوا الذبحة ، وليحد أحدكم شفرته ، وليرح ذبيحته . رواه مسلم .
“আল্লাহ তা'আলা সব ক্ষেত্রে এহসানের নীতি রেখে দিয়েছেন। সুতরাং তোমরা যখন কোন প্রাণী হত্যা করো তখন সে হত্যাটা সুন্দরভাবে করো, আর যখন জবাই করো তখন জবাইটা সুন্দর করে করো। তোমরা ছুরি ধার দিয়ে নিও যাতে তোমাদের জবেহকৃত প্রাণীটি শান্তি পায়।” (সহীহ্ মুসলমি.)
মোট কথা পুরো ইসলামী জীবনটাই ইহসানের চাদরে মোড়াতে হবে। ইবাদাত করার ক্ষেত্রে যেমন ইহসান রয়েছে, অনুরূপ হারাম কাজ থেকে বিরত থাকার ক্ষেত্রেও ইহসান আছে। এমনকি মুরগি জবাই করা থেকে নিয়ে, লেন-দেন, চাল-চলন, আচার-ব্যবহার, মুয়ামালাত ও মুয়াশারাত সর্ব ক্ষেত্রেই ইহসানের মানে উন্নিত হওয়াই একজন মু'মিনের পূর্ণতা।
(বিস্তারিতঃ সূরা নিসা:১২৫, সূরা মায়েদা:৫০, সাজদাহ:৭, হুদ:৭, কাহাফ:৭, মূলক:২, তাওবাহ:১২১, সূরা বাক্বারা:১১২ প্রভৃতি আয়াত।)
ইহসানের মর্মকথা বা দাবী হচ্ছে-
✪ আল্লাহকে পূর্ণ মর্যাদা দেয়া,
✪ আল্লাহকে পরিপূর্ণ সম্মান করা,
✪ আল্লাহকে পূর্ণমাত্রায় ভয় করা এবং ইখলাস ও তাক্বওয়ার ভিত্তিতে শুধু হারাম থেকে নয় বরং মাকরূহ থেকেও পূর্ণ বিরত থাকা এবং
✪ সব 'আমাল সবসময় সব থেকে সুন্দর ও নিখুঁতভাবে সম্পাদন করা। (সূরা শুয়ারা:২১৭-২২০)
ইহসানের গুরুত্ব
আল্লাহর কাছে ইহসানের গুরুত্ব অপরিসীম। এই মানের লোকদেরকে কুরআনে ‘মুহসিন’ বা সৎকর্মপরায়ন নামে অভিহিত করা হয়েছে। নিচে ইহসানের গুরুত্বের কিছু নমুনা দেওয়া হলো-
বিপদে-আপদে আল্লাহ তা'আলা এদের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা বলেনঃ
إِنَّ اللَّهَ مَعَ الَّذِينَ اتَّقَوْا وَالَّذِينَ هُمْ مُحْسِنُونَ
“আল্লাহ তা'আলা নিশ্চয় পরহেজগার এবং মুহসিনীন বা সৎকর্মশীলদের সাথে আছেন”। (সূরা নাহাল:১২৮)
আল্লাহ তা'আলা মুহসিনীনদেরকে ভাল বাসেন। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
وَأَحْسِنُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ
“আর তোমরা সুন্দরভাবে সৎকর্ম বাস্তবায়ন কর, নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীল দেরকে ভাল বাসেন”। (সূরা বাক্বারা:১৯৫, আল ইমরান:১৪৩)
আল্লাহর পছন্দের শীর্ষে রয়েছে এই ইহসান, “যিনি জীবন ও মৃত্যু তৈরী করেছেন এজন্য যে, তোমাদের মধ্যে কে সব থেকে বেশী সুন্দর 'আমাল করছে তা পরীক্ষা করা”। (সূরা মুলক:২)