সকল নাবী-রসুলগনের দাওয়াতের মূল উদ্দেশ্য ছিল তাওহীদুল উলুহ্যিয়াহ্। আর এই প্রকার তাওহীদকেই কাফিরগণ অমান্য করেছিল। এবং নূহ ('আলাইহিস সালাম) থেকে নিয়ে আমাদের নাবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পর্যন্ত সকল রাসূল ও তাঁদের উম্মাতের মাঝে মূল বিরােধ ছিল এই তাওহীদকেই কেন্দ্র করে। আর এই প্রকারের তাওহীদকে তাওহীদুল ইবাদাহও বলা হয়।
উলুহিয়্যাহ্ মানে ইবাদাত যা দাসত্বের একত্ববাদ।
বান্দার সকল শরিয়ত সম্মত ক্রিয়া-কর্ম তথা ইবাদাতকে কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট করাই হচ্ছে তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ, যা সে তাঁর নৈকট্য বা সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে করে থাকে। যেমন- দু’আ বা প্রার্থনা করা, নযর বা মান্নত, কুরবানী, আশা -আকাংখা, ভয় -ভরসা ইত্যাদি।
তাওহীদুল উলুহিয়্যাহর কিছু উদাহরন
ছালাত বা নামাযঃ আল্লাহ ব্যতীত অন্যের উদ্দেশ্যে ছালাত না পড়া।
প্রার্থনাঃ আল্লাহ ছাড়া কারাে নিকট প্রার্থনা না করা। এতএব কোন নাবী বা ওলী (পীর) বা ফেরেস্তাকে ডাকা যাবেনা, (এবং তাদের নিকট প্রার্থনাও করা চলবে না।)
যবেহ্ করাঃ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারাে উদ্দেশ্যে প্রাণী যবেহ্ না করা। সুতরাং কোন মানুষ বা জ্বীন বা ফেরেস্তার উদ্দেশ্যে প্রাণী যবেহ করা বৈধ নয়।
নযর বা মান্নত করাঃ আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারাে উদ্দেশ্যে কোন কিছু মান্নত না করা।
সাহায্য প্রার্থনাঃ যে সব বিষয়ে আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারাে কোন ক্ষমতা নেই সে সব বিষয়ে একমাত্র তিনি ব্যতীত অন্যের সাহায্য প্রার্থনা না করা বা সাহায্য না চাওয়া।
বিপদে আশ্রয় প্রার্থনাঃ যে সব বিষয়ে আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারাে কোন ক্ষমতা নেই, সে সব বিষয়ে একমাত্র আল্লাহ্ ব্যতীত করাে নিকট বিপদাপদে আশ্রয় প্রার্থনা করা যাবে না। সুতরাং মৃত ব্যক্তি বা সৎ ব্যক্তিদের নিকট বিপদাপদে আশ্রয় কামনা করা হারাম।
প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সকল রাসুলের দাওয়াতের মূল বিষয় হওয়া।
দালীলঃ
আল্লাহর ঘোষণাঃ
وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُونِ
“আপনার পূর্বে আমি যে রাসূলই প্রেরণ করেছি, তাকে এ আদেশই প্রেরণ করেছি যে, আমি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই। সুতরাং আমারই ইবাদাত কর।”- সূরা আম্বীয়া- ৩৬
আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
وَلَـقَدۡ بَعَثۡنَا فِىۡ كُلِّ اُمَّةٍ رَّسُوۡلًا اَنِ اعۡبُدُوا اللّٰهَ وَاجۡتَنِبُوا الطَّاغُوۡتَ
“এবং প্রত্যেক জাতির নিকট আমরা একজন করে রাসূল (দুত) প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তােমরা আল্লাহর ইবাদাত কর এবং ত্বাগুত (আল্লাহ ব্যতীত সকল প্রকার বাত্বিল শক্তিকে ত্বাগুত বলা হয়) থেকে দূরে থাক।”- সূরা নাহাল- ৩৬
প্রত্যেক রাসূল তাওহীদুল উলুহিয়্যাতের মাধ্যমেই তাঁর উম্মাতের মাঝে দাওয়াতের কাজ শুরু করেছিলেন। যেমন- নূহ, হুদ, ছালেহ্, শুআইব প্রমূখ নাবীগণ ‘আলাইহিমুস সালাম বলেছিলেনঃ
يٰقَوۡمِ اعۡبُدُوا اللّٰهَ مَا لَـكُمۡ مِّنۡ اِلٰهٍ غَيۡرُهٗ ؕ
“হে আমার সম্প্রদায় তােমরা আল্লাহর ইবাদাত কর, তিনি ব্যতীত তােমাদের কোন সত্য উপাস্য নেই।”-আ'রাফ : ৫৯, ৬৫, ৮৫
আল্লাহ তা’আলা আরও বলেনঃ
وَإِلَى عَادٍ أَخَاهُمْ هُودًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ
(৬৫) আ’দ জাতির নিকট ওদের ভ্রাতা হূদকে পাঠিয়েছিলাম।[1] সে বলেছিল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা (কেবল) আল্লাহর উপাসনা কর। তিনি ব্যতীত অন্য কোন (সত্যিকার) উপাস্য নেই, তোমরা কি সাবধান হবে না?’
আল্লাহর বানীঃ
وَإِلَى ثَمُودَ أَخَاهُمْ صَالِحًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ
(৭৩) সামূদ জাতির নিকট তাদের ভ্রাতা স্বালেহকে পাঠিয়েছিলাম।[1] সে বলেছিল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা (কেবল) আল্লাহর উপাসনা কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন (সত্যিকার) উপাস্য নেই।
আল্লাহর বলেনঃ
وَإِلَى مَدْيَنَ أَخَاهُمْ شُعَيْبًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ
(৮৫) মাদয়ানবাসীদের নিকট তাদের ভ্রাতা শুআইবকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা (কেবল) আল্লাহর উপাসনা কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন (সত্যিকার) উপাস্য নেই। (আল আ’রাফঃ ৮৫)
প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির উপর সর্বপ্রথম এই তাওহীদের জ্ঞানার্জন অবশ্য কর্তব্য হওয়া।
প্রখ্যাত সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
…أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَشْهَدُوا أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَيُقِيمُوا الصَّلاَةَ، وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ، فَإِذَا فَعَلُوا ذَلِكَ عَصَمُوا مِنِّي دِمَاءَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ إِلاَّ بِحَقِّ الإِسْلاَمِ، وَحِسَابُهُمْ عَلَى اللَّهِ
“আমি আদিষ্ট হয়েছি মানুষের সাথে যুদ্ধ করার, যে পর্যন্ত তারা এ কথার সাক্ষ্য না দেয় যে, আল্লাহ্ ব্যতীত সত্য কোন উপাস্য নেই এবং নাবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রাসূল। এবং ছালাত প্রতিষ্ঠা করে ও যাকাত প্রদান করে। যখন তারা এটা মেনে নেবে, তখন ইসলামের অধিকার (ইসলামের অধিকার হচ্ছে: তিনটি ক্ষেত্রে কালেমা পাঠকারীর জান হত্যা করা বৈধঃ ১) অন্যায়ভখাবে কাউকে হত্যা করলে, ২) বিবাহিত ব্যক্তি ব্যভিচার করলে, ৩) ইসলাম ধর্ম পরিত্যা করে মুরতাদ হলে। (বুখারী ও মুসলিম) আর সম্পদের ক্ষেত্রে ইসলামের অধিকার হচ্ছে: যাকাত) ব্যতীত তাদের জান ও মাল নিরাপদ হয়ে যাবে। আর তাদের কাজের হিসাব আল্লাহর কাছে।”- ছহীহ বুখারী ও মুসলিম
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
فَاعۡلَمۡ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللّٰهُ وَاسۡتَغۡفِرۡ لِذَنۡۢبِكَ
“অতঃএব জেনে রাখুন আল্লাহ্ ছাড়া সঠিক কোন উপাস্য নেই, আর ক্ষমা প্রার্থনা করুন আপনার ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য।”- সুরা মুহাম্মাদ: ১৯
এই কারণে কোন ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করতে চাইলে তাকে সর্বপ্রথম কালেমায়ে শাহাদাত উচ্চারণের নির্দেশ দেয়া হয়।
أشهدُ أنْ لا إلهَ إلاَّ اللهُ وأشهدُ أنَّ محمّداً رسولُ الله
অর্থাৎ- “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই এবং আরাে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নাবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রাসূল।”
ইহকালীন যাবতীয় কল্যাণ ও সুখ-শান্তি তাওহীদুল উলুহিয়্যার জ্ঞান লাভ করার উপরই নির্ভরশীল।
এই তাওহীদই সকল 'আমাল প্রস্তুত করার মূল ভিত্তি। এর বাস্তবায়ন ছাড়া কোন 'আমালই পরিশুদ্ধ বা গ্রহণযােগ্য হবে না। কেননা এই তাওহীদের সঠিক বাস্তবায়ন না হলে এর পরিপন্থী বিষয় অবশ্যই সেখানে স্থান পাবে, আর তা হলাে শির্ক।
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা এরশাদ করেনঃ
وَقَدِمۡنَاۤ اِلٰى مَا عَمِلُوۡا مِنۡ عَمَلٍ فَجَعَلۡنٰهُ هَبَآءً مَّنۡثُوۡرًا
“আর আমি তাদের কৃতকর্মের প্রতি অগ্রসর হব। অতঃপর সেগুলিকে বিক্ষিপ্ত ধুলিকণা রূপ করে দেব।”- আল ফুরকান: ২৩
আল্লাহ তা'আলা আরাে এরশাদ করেনঃ
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ
“নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করার অপরাধ ক্ষমা করবেন না। এ ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন।”- সূরা নিসা: ৪৮, ১১৬
আল্লাহ আরাে বলেন,
اِنَّهٗ مَنۡ يُّشۡرِكۡ بِاللّٰهِ فَقَدۡ حَرَّمَ اللّٰهُ عَلَيۡهِ الۡجَـنَّةَ وَمَاۡوٰٮهُ النَّارُ ؕ وَمَا لِلظّٰلِمِيۡنَ مِنۡ اَنۡصَارٍ
“নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশী স্থাপন করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন। তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। আর জালিমের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই।”- সূরা মায়েদা: ৭২
মহান আল্লাহ সরাসরি তাওহীদুল উলূহিয়া মেনে চলার আদেশ করেছেন
یٰۤاَیُّہَا النَّاسُ اعۡبُدُوۡا رَبَّکُمُ الَّذِیۡ خَلَقَکُمۡ وَ الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَتَّقُوۡنَ ﴿ۙ۲۱﴾
“হে মানুষ! ‘তোমরা তোমাদের সেই প্রতিপালকের ইবাদাত কর যিনি তোমাদেরকে ও তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা মুত্তাকী (পরহেযগার) হতে পার’।”- আল বাক্বারাহ: ২১
আল্লাহ তা'আলা আরাে বলেনঃ
وَ اعۡبُدُوا اللّٰہَ وَ لَا تُشۡرِکُوۡا بِہٖ شَیۡئًا
“তোমরা আল্লাহর উপাসনা কর ও কোন কিছুকে তাঁর অংশী করো না।”- সূরা নিসা: ৩৬
আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা আরাে বলেন,
وَقَضَى رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ
“তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তিনি ছাড়া অন্য কারো উপাসনা করবে না।”- সূরা ইসরা: ২৩
ফেরেশ্তা এবং কিতাব নাজিলের মূল লক্ষও হলো তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ বাস্তবায়ন
يُنَزِّلُ الْمَلَائِكَةَ بِالرُّوحِ مِنْ أَمْرِهِ عَلَى مَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ أَنْ أَنْذِرُوا أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاتَّقُونِ ﴿ۙ۲﴾
“তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা স্বীয় নির্দেশে ওয়াহী (প্রত্যাদেশ) সহ ফিরিশতা অবতীর্ণ করেন, এই মর্মে সতর্ক করবার জন্য যে, আমি ছাড়া কোন (সত্য) উপাস্য নেই; সুতরাং তোমরা আমাকে ভয় কর।।”- আল নাহলঃ ২
উলুহিয়্যাতের পুর্বশর্ত হচ্ছে রুবুবিয়্যাহ
ইলাহ হওয়ার জন্য রুবুবিয়ার বৈশিষ্ট্য থাকা আবশ্যক! যার রব হওয়ার যোগ্যতা নেই তার ইলাহ হওয়ার কোন সুযোগ নেই।
মহান আল্লাহ বলেনঃ
وَاتَّخَذُوا مِن دُونِهِ آلِهَةً لَّا يَخْلُقُونَ شَيْئًا وَهُمْ يُخْلَقُونَ وَلَا يَمْلِكُونَ لِأَنفُسِهِمْ ضَرًّا وَلَا نَفْعًا وَلَا يَمْلِكُونَ مَوْتًا وَلَا حَيَاةً وَلَا نُشُورًا
“আর তারা তাঁর পরিবর্তে ইলাহরূপে এমন কতক জিনিসকে গ্রহণ করেছে, যারা কিছুই সৃষ্টি করতে পারে না, বরং তারা নিজেরাই সৃষ্ট এবং তারা নিজেদেরই অপকার কিংবা উপকার কিছুই করার ক্ষমতা রাখে না। আর মৃত্যু, জীবন ও উত্থানের উপরও কোন ক্ষমতা রাখে না।” সূরা ফুরকান/৩.
এই আয়াতের দিকে তাকালে বাত্বিল ইলাহর দুর্বলতাগুলো স্পষ্ট হয়ে যায়-
“আর তারা তাঁর পরিবর্তে ইলাহরূপে এমন কতক জিনিসকে গ্রহণ করেছে,
তাহলে এমন অক্ষম ও অযোগ্য জিনিস ইলাহ হয় কোন যুক্তিতে? অথচ সত্য ইলাহ, আল্লাহ তা’আলার বৈশিষ্ট্য দেখুন।
আল্লাহ বলেনঃ
اللَّهُ الَّذِي خَلَقَكُمْ ثُمَّ رَزَقَكُمْ ثُمَّ يُمِيتُكُمْ ثُمَّ يُحْيِيكُمْ هَلْ مِن شُرَكَائِكُم مَّن يَفْعَلُ مِن ذَلِكُم مِّن شَيْءٍ
“আল্লাহ্ তিনি, যিনি-
তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন,
তোমাদেরকে রিয্ক দিয়েছেন,
তিনি তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন
অবশেষে তিনি তোমাদেরকে জীবিত করবেন।” (সুরা রুমঃ ৪০)
আল্লাহ্র সাথে মানুষ যাদেরকে শরীক সাব্যস্ত করেছে, তাদের সেই মা'বুদগুলোর এমন কেউ আছে কি, যে এসবের কোন কিছু করতে পারে? তারা যাদেরকে শরীক করে, তিনি (আল্লাহ্) সে সব (শরীক) থেকে মহিমাময়-পবিত্র ও অতি উর্ধে। অর্থাৎ তাদের তৈরী করা উপাস্যদের মধ্যে কেউ কি সৃষ্টিকর্তা ও রিযিকদাতা? জীবন ও মৃত্যু দান করা কি কারো ক্ষমতার আওতাভুক্ত আছে? অথবা মরার পর সে আবার কাউকে পুনরুজ্জীবিত করার ক্ষমতা রাখে? তাহলে তাদের কাজ কী? তারা তাদেরকে উপাস্য বানিয়ে রেখেছে কেন?
এক কথায়, যার মধ্যে রুবুবিয়ার বৈশিষ্ট্য নেই, তাকে উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করা অযৌক্তিক, বিবেক পরিপন্থী!
মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ
يَا أَيُّهَا النَّاسُ ضُرِبَ مَثَلٌ فَاسْتَمِعُوا لَهُ إِنَّ الَّذِينَ تَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ لَن يَخْلُقُوا ذُبَابًا وَلَوِ اجْتَمَعُوا لَهُ وَإِن يَسْلُبْهُمُ الذُّبَابُ شَيْئًا لَّا يَسْتَنقِذُوهُ مِنْهُ ضَعُفَ الطَّالِبُ وَالْمَطْلُوبُ مَا قَدَرُوا اللَّهَ حَقَّ قَدْرِهِ إِنَّ اللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ
“হে মানুষ, একটি উপমা পেশ করা হল, মনোযোগ দিয়ে তা শোন, তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাক তারা কখনো একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারবে না। যদিও তারা এ উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়। আর যদি মাছি তাদের কাছ থেকে কিছু ছিনিয়ে নেয়, তারা তার কাছ থেকে তাও উদ্ধার করতে পারবে না। অন্বেষণকারী ও যার কাছে অন্বেষণ করা হয় উভয়েই দুর্বল।* (সূরা হাজ/৭৩-৭৪)
আরো দেখুন! মহান আল্লাহ বলেনঃ
قُلِ ادْعُواْ الَّذِينَ زَعَمْتُم مِّن دُونِهِ فَلاَ يَمْلِكُونَ كَشْفَ الضُّرِّ عَنكُمْ وَلاَ تَحْوِيلاً
“বল, ‘তাদেরকে ডাক, আল্লাহ ছাড়া তোমরা যাদেরকে (উপাস্য) মনে কর, তারা তো তোমাদের দুঃখ-দুর্দশা দূর করার ও পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে না’।” (সূরা ইসরাঃ৫৬)
তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ ও তাওহীদুল উলুহিয়্যাহর সাধারণ পার্থক্য
-শুধুমাত্র বিশ্বাসের কারনে ঘরে বসেই কোথাও না যেয়েই রুব্যুবিয়াহ নষ্ট হয়। যেমনঃ যদি কারও বিশ্বাস থাকে ওমুক পীরের ক্ষমতা আছে সন্তান দান করার! যদিও সে পীরের কাছে যায়নি। অন্যদিকে, উলুহ্যিয়া নষ্ট হয় আল্লাহ ছাড়া কারও ইবাদাত করলে।
-তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ হলো আল্লাহর কর্মে এবং উলুহ্যিয়াহ্ হলো বান্দার কর্মে আল্লাহ্কে এক ও অদ্বিতীয় হিসাবে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা।
-তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ রুবুবিয়্যাহ্কে অপরিহার্য করে। কিন্তু রুবুবিয়্যাহর জন্য উলুহিয়্যাহ আবশ্যক না।