আক্বীদার এত বেশি গুরুত্ব ও মর্যাদা সেটি সব কিছুর আগে সর্বাধিক গুরুত্বের সাথে আলােচনা, পর্যালােচনা ও গবেষণা হওয়া প্রয়ােজন। সবচেয়ে বেশি দরকার এ ব্যাপারে জ্ঞানার্জন করা। কারণ, এর উপরই মানব জাতির দুনিয়া ও আখিরাতের সৌভাগ্য ও সাফল্য নির্ভর করছে। আক্বীদার জ্ঞান ব্যাতিরেকে কোন ব্যক্তি প্রকৃত মুসলিম হতে পারে না ।
কোন অবকাঠামো যেমন ভিত্তি ছাড়া অকল্পনীয়, তেমনভাবে একজন মুসলিমের জীবনে আক্বীদা ও বিশ্বাসের দর্শন এমনই একটি অপরিহার্য বিষয় যা ব্যতীত সে নিজেকে মুসলিম হওয়ার অধিকার ও দাবী হারিয়ে ফেলে। এটা এমন এক অতুলনীয় শক্তির আঁধার যা একজন মুসলমানকে তার আদর্শের প্রতি শতভাগ আস্থাবান করে তুলে এবং জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে সেই বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটাতে বিরামহীনভাবে সচেষ্ট রাখে।
অপরপক্ষে মানবজগতের যাবতীয় পথভ্রষ্টতার মূলে রয়েছে এই মৌলিক আক্বীদা থেকে বিচ্যুত হওয়া। এজন্য একজন মুসলমানের জন্য আক্বীদা-বিশ্বাসের ব্যাপারে সুস্পষ্ট জ্ঞান রাখা এবং সে বিশ্বাসের যথার্থতা নিশ্চিত করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কেননা বিশ্বাসের বিশুদ্ধতা ব্যতীত কোন ব্যক্তি প্রকৃত অর্থে মুসলিম হতে পারে না। প্রতিটি কথা ও কর্ম যদি বিশুদ্ধ আক্বীদা ও বিশ্বাস থেকে নির্গত না হয় তবে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহ বলেন,
“যে ব্যক্তি বিশ্বাসের বিষয়ে অবিশ্বাস রাখে তার শ্রম বিফলে যাবে এবং পরকালে সে ক্ষতিগ্রস্থ হবে” [ সূরা মায়েদা – ৫]
তিনি আরো বলেন,
“(হে নবী!) তোমাকে এবং তোমার পূর্বসূরিদের আমি প্রত্যাদেশ করেছি যে, যদি তুমি আমার শরীক স্থাপন কর তবে তোমার যাবতীয় শ্রম বিফলে যাবে এবং তুমি ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হবে” [ সূরা যুমার ৬৫]
মানুষ যুগে যুগে পথভ্রষ্ট হয়েছে মূলতঃ আক্বীদার ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি ঘটার কারণে। এজন্য বিষয়টি সূক্ষ্মতা ও সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে জানা অপরিহার্য।
আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা বলেনঃ
فَمَنۡ يَّكۡفُرۡ بِالطَّاغُوۡتِ وَيُؤۡمِنۡۢ بِاللّٰهِ فَقَدِ اسۡتَمۡسَكَ بِالۡعُرۡوَةِ الۡوُثۡقٰى لَا انْفِصَامَ لَهَا
“সুতরাং যে ত্বাগুতকে অস্বীকার করে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করল সে যেন শক্ত হাতল মজবুতভাবে ধারণ করল যা বিচ্ছিন্ন হওয়ার নয়।” - (সূরা বাকারাঃ ২৫৬)
এ কথার মানে হল, যে এ আক্বীদাহ হতে হাত গুটিয়ে নিবে সে অলীক-কল্পনা ও ভ্রান্ত বিশ্বাসকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করবে। কারণ, সঠিক পথ ছেড়ে দিলে সেখানে গােমরাহী ছাড়া অন্যকিছু থাকতে পারেনা। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
ذٰ لِكَ بِاَنَّ اللّٰهَ هُوَ الۡحَـقُّ وَاَنَّ مَا يَدۡعُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِهٖ هُوَ الۡبَاطِلُ
“তা এ জন্যে যে, আল্লাহই তাে প্রকৃত সত্য আর তাঁকে ছাড়া ওরা যা কিছু আহবান করে তা ভ্রান্ত।”- (সূরা হজ্জঃ ৬২)
[উৎস: ইরশাদ ইলা সহীহ্িল ইতিকাদ, লেখক: শাইখ আল্লাম সালিহ আল ফাউযান]
ঈমান-আক্বীদাহ শুদ্ধ না হলে ছালাত-ছিয়াম সহ কোন ইবাদই আল্লাহর নিকট গ্রহনীয় হবে না। যেমন কেউ যদি শির্কী আক্বীদাহ পােষণ করে তাহলে যত ইবাদাতই করুক না কেন সব কিছুই বিফলে যাবে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনلَـئِنۡ اَشۡرَكۡتَ لَيَحۡبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُوۡنَنَّ مِنَ الۡخٰسِرِيۡنَ
“যদি শির্ক করাে তবে তােমার সকল 'আমাল নিষ্ফল হবে এবং তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে গণ্য হবে।”- (সূরা যুমারঃ ৬৫)
ঈমান, ইখলাস ও রাসুল (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অনুসরণ (যেগুলাে আক্বীদার মূল ভিত্তি) এর ক্ষেত্রে রুটি থাকবে আখিরাতে সকল নেককাজ ধুলিকনার মত অর্থহীন হয়ে যাবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:وَقَدِمۡنَاۤ اِلٰى مَا عَمِلُوۡا مِنۡ عَمَلٍ فَجَعَلۡنٰهُ هَبَآءً مَّنۡثُوۡرًا
“আমি তাদের কৃতকর্মের নিকট আগমন করে সেগুলােকে উৎক্ষিপ্ত ধুলিকণায় পরিণত করব।”- (সূরা ফুরকানঃ ২৩)
ইসলামী আক্বীদাহ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা প্রতিটি মুসলিমের জন্য আবশ্যক। আক্বীদাহ বলতে কী বুঝায়, আক্বীদার উপর আর কী কী জিনিস নির্ভর করে, বিপরীত আক্বীদাগুলাে কী কী, কী কারণে আক্বীদাহ নষ্ট হয় বা তাতে কমতি সৃষ্টি হয় যমেন বড় শির্ক, ছােট শির্ক ইত্যাদি বিষয়ে প্রতিটি মুসলিমের জানা বা শিক্ষা অর্জন করা অপরিহার্য। আল্লাহ বলেনঃ
فَاعۡلَمۡ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللّٰهُ وَاسۡتَغۡفِرۡ لِذَنۡۢبِكَ
“অতএব, জেনে রাখ যে আল্লাহ ছাড়া ইবাদাতের উপযুক্ত আর কেউ নাই। এবং তােমার গুনাহর জন্য তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর।”- সুরা মুহাম্মাদঃ ১৯
ইমাম বুখারী রাহ. সহীহ্ বুখারীতে একটি অধ্যায়ের শিরনাম রচনা করেছেন এভাবেঃ
بَابُ اْلعِلْمِ قَبْلَ الْقَوْلِ وَالْعَمَلِ
অধ্যায়ঃ "কথা বলা এবং 'আমাল করার আগে জ্ঞানার্জন করা"
এরপর তিনি এ শিরনামের স্বপক্ষে পূর্বোক্ত আয়াতটিকে প্রমাণ হিসেবে পেশ করেছেন। উৎস: ইরশাদ ইলা সহীহ্িল ইতিকাদ, লেখক: শাইখ আল্লাম সালিহ আল ফাউযান,
উপরােক্ত আলােচনা থেকে প্রতিভাত হল যে, ঈমান ও আক্বীদাহ সঠিক না হওয়া পর্যন্ত অন্যান্য নেক 'আমালের কোনই মুল্য নাই। তাই 'আমাল সংশােধনের পূর্বে আক্বীদাহ সংশােধ করা এবং সে বিষয়ে জ্ঞানার্জন করা আবশ্যক। আল্লাহু আলাম।
আক্বীদার মূল ভিত্তি ৬টি
আল্লাহকে বিশ্বাস করা,
আল্লাহর ফেরেশতা বিশ্বাস করা,
তাঁর কিতাব বিশ্বাস করা,
নাবী-রাসূল বিশ্বাস করা,
আখিরাত বিশ্বাস করা,
ভাগ্যের ভালাে মন্দ বিশ্বাস করা,
এগুলােকে ঈমানের রুকন বলা হয়।
আক্বীদার উৎস হলাে কুরআন ও সহীহ্ হাদীছ। কুরআন ও সহীহ্ হাদীছে নেই এমন কোন আক্বীদাহ গ্রহণ করা মুসলিমের জন্য জায়েয নেই।
সহীহ্ আক্বীদাহ তথা ইসলামী আক্বীদার উপকারীতা
আল্লাহ যে উদ্দেশ্যে আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তা বুঝা এবং বাস্তবায়ন করা সহজ হবে। ফলে আল্লাহ সন্তুষ্ট হবেন এবং জান্নাত দান করবেন, তাওহীদের উপর টিকে থাকা সহজ হবে এবং শির্ক থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব হবে।