সংজ্ঞা বা পরিভাষায়
শির্ক হল তাওহীদের বিপরীত। শির্ক ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। শির্ককারী ব্যক্তি মৃত্যুর পূর্বে তাওবা না করে মারা গেলে আল্লাহ তাকে কখনোই ক্ষমা করবেন না।
মহান আল্লাহ বলেনঃ
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدِ افْتَرَى إِثْمًا عَظِيمًا
“নিশ্চই আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করার অপরাধ ক্ষমা করবেন না। এ ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন; আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করে সে এক মহা পাপ রচনা করে।” (সূরা নিসাঃ ৪৮ ও ১১৬),
অর্থাৎ তওবা না করে মারা গেলে আল্লাহ চাইলে অন্যান্য সকল পাপ ক্ষমা করলে করতেও পারেন; কিন্তু শির্কের পাপ তিনি কাউকেই ক্ষমা করবেন না।
???? শির্কের ভয়াবহতা
❌ শির্ককারী ব্যক্তির জন্য আল্লাহর জান্নাত চিরতরে হারাম, সে চিরকাল জাহান্নামে শাস্তি ভোগ করবে। কোন পীর-মুরশিদ, ফকির-দরবেশ, মাজার বা মুর্তি কেউ তাকে সাহায্য করে জাহান্নাম থেকে বাঁচাতে পারবে না।
আল্লাহ বলেনঃ
إِنَّهُ مَن يُشْرِكْ بِاللّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللّهُ عَلَيهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ
“নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার ঠিকানা জাহান্নাম। আর যালিমদের (শির্ককারীদের) জন্য কোন সাহায্যকারী নেই।” (আল মা-ইদাহঃ ৭২)
অর্থাৎ অন্যান্য পাপের শাস্তিভোগ করার পর একদিন না একদিন মু'মিন বান্দা জাহান্নাম থেকে বের হয়ে জান্নাতে যাবে; কিন্তু শির্ককারীরা কখনই জাহান্নাম থেকে বের হতে পারবে না। জাহান্নামই তাদের শেষ ও একমাত্র ঠিকানা।
❌ যদি শির্ক করার পাশাপাশি নেক 'আমাল এবং বিশুদ্ধ ইবাদাত করা হয় তাহলে সেই ইবাদাত কবুল হবে না। যেমন আল্লাহ নিজেই বলেনঃ
وَقَدِمْنَا إِلَى مَا عَمِلُوا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَاء مَّنثُوراً
“তাদের 'আমালের প্রতি আমি অগ্রসর হয়ে সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধুলিকনায় পরিনত করে দেব।” (আল ফুরকানঃ২৩)
বি:দ্র: هَبَاء مَّنثُوراً “হাবা আম্ মানছূরা” বলা হয় ঐ বিক্ষিপ্ত ধুলিকনাকে যা খোলা জানালা দিয়ে প্রবাহিত রোদের কিরণের মধ্যে উড়ে বেড়াতে দেখা যায় কিন্তু হাত বাড়ালে তা ধরা যায় না। শির্ককারীদের মূল্যবান নেক 'আমালগুলো শেষ বিচারের দিনে অনুরূপ বিক্ষিপ্ত হয়ে যাবে এবং তা তাদের কোনই কাজে আসবে না।
❌ শির্ক করলে বড় বড় পীর-বুযর্গদেরও রক্ষা নেই। সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা; নাবী-রাসূলগণও যদি শির্ক করতেন তাহলে তাদেরও রক্ষা ছিল না।
আল্লাহপাক সূরা আনআমের মধ্যে ১৮জন নাবী ও রাসূলের নাম উল্লেখ করার পর বলেনঃ
َلَوْ أَشْرَكُواْ لَحَبِطَ عَنْهُم مَّا كَانُواْ يَعْمَلُونَ
“তাঁরাও যদি শির্ক করতেন তাহলে তাঁদেরও যাবতীয় 'আমাল বরবাদ হয়ে যেত।” ( সূরা আন আমঃ৮৮)
সুতরাং যে সকল গুরু ভাইয়েরা শির্কের পাঠ দান করে থাকেন তারা একটু ভেবে দেখবেন?
❌ শুধু অন্যান্য নাবীদেরকেই নয়; বরং সর্বশেষ নাবী, সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল, সকল নাবী-রাসূলগণের সর্দার এবং সর্বশ্রেষ্ঠ মহা মানব মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কেও আল্লাহ তায়ালা কঠোরভাবে শির্ক থেকে সাবধান করে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেনঃ
لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ
“তুমি যদি আল্লাহর সাথে শরীক কর তাহলে তোমার 'আমাল অবশ্যই নিষ্ফল হবে এবং তুমি হবে ক্ষতিগ্রস্থদের অর্ন্তভূক্ত।” (সূরা যুমারঃ৬৫, আরো দেখুন সূরা ইউনুসঃ১০৬)
সুতরাং তাঁর চাইতে বড় বুজর্গ আর কে আছে? আমরা জানি যে, নাবী বা রাসূলগণের কখনো শির্ক করার সামান্যতমও সম্ভাবনা থাকে না। তথাপী তাঁদেরকে উক্ত রূপ কঠোর হুমকি দেয়ার প্রকৃত উদ্দেশ্য কি? এর প্রকৃত উদ্দেশ্য হল: শির্কের ভয়াবহতা উম্মাত যেন বুঝতে পারে।
❌ শির্ক সব থেকে বড় পাপ, এই পৃথিবীতে শির্ক থেকে বড় কোন পাপ নাই। উপরের দালীলগুলো থেকে ইতি মধ্যে যদিও বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে গেছে, তথাপি একটি হাদিছের ভাষ্য কোনভাবেই এড়িয়ে যাওয়া যায় না। বিখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ(রাঃ) বলেন; ইয়া রাসূলাল্লাহ! সব চাইতে বড় পাপ কোনটি? রাসূলুল্লাহ বললেনঃ
“যে আল্লাহ তোমাকে সৃষ্টি করেছেন তার সাথে শরীক করা।” (বুখারী,মুসলিম, মিশকাত-করাচী ছাপা ৪৯পৃঃ)
???? শির্ক থেকে বাঁচার জন্য দু’আ করা
???? শির্ক থেকে বাঁচার জন্য প্রতিদিন আল্লাহর কাছে দুয়া করা উচিৎ। এ জন্য ইবরাহীম ('আলাইহিস সালাম) আল্লাহর কাছে কাতর কন্ঠে ফরিয়াদ করেছেন এই বলে,
وَاجْنُبْنِي وَبَنِيَّ أَن نَّعْبُدَ الأَصْنَامَ }إبراهيم
“হে আল্লাহ আমাকে ও আমার পুত্রকে তুমি মূর্তি পুজা হতে বাঁচাও।” (সূরা ইবরাহীমঃ৩৫)
???? বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজেও শির্ক থেকে বাঁচার জন্য বিনীতভাবে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছেন এই বলে,
اللهم إني أعوذ بك أن أشرك بك و أنا أعلم و أستغفرك لما لا أعلم
“হে আল্লাহ! জ্ঞাতসারে শির্ক করা থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। আর অজ্ঞাতসারে শির্ক করে ফেললে তা থেকে তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।” (হাদীছ সহীহ্, দেখুন- সহীহ্ ও যয়ীফ জামে সগীর, হা নং ৬০৪৪)
জাতীর পিতা ইব্রাহীম ('আলাইহিস সালাম) এবং সর্বকালের ও সর্বযুগের মহামানব মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজেই যদি শির্ক থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে থাকেন, তাহলে তাদের দুজনের চেয়ে আর কে নিজেকে শির্ক থেকে অধিক নিরাপদ মনে করতে পারে? তাই শির্ক থেকে প্রতিদিন আল্লাহর কাছে আমাদের দুয়া করা উচিৎ নয় কি?
???? মু’মিনের জীবনে শির্কের কুফল
বেশ কয়েকটি কারনে শির্ককে সব থেকে বড় জুলম বলা হয়। কারণগুলোর দিকে একবার নজর দিলেই শির্কের কুফল বা পরিনতি সম্পর্কে বোঝা যাবে। যথাঃ
শির্ক করলে মাখলূককে খালেকের সমতুল্য সাব্যস্ত করা হয়।
আল্লাহ বারবার ঘোষণা করেছেন যে, তাওবা না করলে শির্ক কখনোও ক্ষমা করবেন না।
শির্ককারীর জন্য জান্নাত চিরতরে হারাম।
শির্ক করলে জীবনের সমূদয় নেক 'আমাল নষ্ট হয়ে যায়।
শির্ক করলে তার জান মাল হরণ করা ইসলামী রাষ্ট্রের জন্য বৈধ হয়ে যায়।
শির্ক হলো সব থেকে বড় কাবীরা গুণাহ।
শির্ক হলো মহান রবের জন্য ত্রুটি ও অপূর্ণতা সাব্যস্ত করা, যা একটি ভয়াবহ অপরাধ, কেননা আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা এ থেকে পূত-পবিত্র।
???? শির্কের মাথা তথা ত্বগুতের পরিচয়
???? শাব্দিক বা আভিধানিক অর্থ
ত্বাগুত অর্থ সীমালংঘন করা।
???? সংজ্ঞা বা পরিভাষায়
ইসলামের সীমা-পরিসীমা লংঘণ করে অবাধ্যতা ও কুফুরীতে প্রবেশকারী প্রত্যেক সত্বাকে ত্বাগুত বলে। সকল ত্বাগুত কাফির। তাই ছোট-খাট অবাধ্যতাকে ত্বাগুত বলা যাবে না। ইমাম ইবনুল কাইইয়্যুম র. বলেনঃ আল্লাহ বিরোধী এই ৫টি অপশক্তি হল ত্বগুতের মাথা, যথা-
❌ ১। শাইত্বান,
❌ ২। যার ইবাদাত করা হয় আর সে তাতে সন্তুষ্ট,
❌ ৩। যে নিজের ইবাদাতের দিকে মানুষকে ডাকে
❌ ৪। যে গায়েব জানার দাবী করে
❌ ৫। যে মানব রচিত বিধান দিয়ে ফয়সালা করে, বা শাসন করে।
পবিত্র আল কুরআনে ত্বাগুত সম্পর্কে আরো স্টাডি করতেঃ সূরা বাক্বারাঃ ২৫৬,২৫৭, সূরা নিসাঃ ৫১, ৬০, ৭৬, সূরা মায়েদাহঃ৬০, সূরা নাহলঃ৩৬, সূরা যুমারঃ১৭