Learn more
আমরা হুট করেই বলে দেই এই লোকটি একটা আস্তো বোকা। বুদ্ধি বা জ্ঞানের কারনে যে মানুষ পৃথিবী সেরা জীব সেই মানুষ বোকা হয় কি করে? আসলে কি আমি আপনার থেকে বেশি বুদ্ধিমান? একজন মানুষের বুদ্ধি বা জ্ঞানের সাথে অন্য মানুষের জ্ঞানের তুলনা করি কিসের ভিত্তিতে? এর কি কোন স্টান্ডার্ট আছে? থাকলে সেটা কি?
সৃষ্টিকর্তা মানুষ যখন পাঠায় তখন সবাইকে সমান জ্ঞানের ব্রেইন নামক একটি যন্ত্র দিয়ে পাঠায় যার ধরুন মানুষ পৃথিবীতে আসার পর ২-৩ তিন বছরে একটা ভাষায় কথা বলতে পারে। আর এই কথা বলা যে কত বড় জ্ঞানের বিষয় তা সাধারনত সবাই না বুঝলেও যারা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা বুদ্ধিসম্পন্ন মেশিন তৈরি নিয়ে কাজ করে তারা বুঝতে পারে।
“আপনি কেমন আছেন?” আমরা যদি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে কোনও মেশিন থেকে এই প্রশ্নের জবাব পেতে চাই, তবে কয়েক হাজার কোড লিখতে হবে এবং শত শত তথ্য মেশিন দিতে হবে কারণ এই প্রশ্নের জবাব ভালো-খারাপ, খুব ভালো বা খুব খারাপ এইভাবে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে অনেক ধরনের হতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল - এই উত্তরের জন্য বিভিন্ন ধরনের ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন দরকার যা মেশিন থেকে পাওয়াটা খুব কঠিন তবে একজন মানুষ যতই অক্ষর জ্ঞানহীন বা পৃথিবী সম্পর্কে অজ্ঞ হোক না কেন, অবস্থা অনুযায়ী যথাযথ অভিব্যক্তি দিয়ে সে এই প্রশ্নের জবাব সাবলীনভাবে দিতে পারে।
পৃথিবীতে প্রত্যেক মানুষই জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান এবং একজন অপেক্ষা আরেক জন ব্যাক্তি কম বা বেশি জ্ঞানী তা তুলনা করা বা বলাটা কঠিন কারণ মানুষ যখন জন্মগ্রহন করে, তখন সবাই সমান বুদ্ধি নিয়ে জন্মায়। পৃথিবীতে আসার পর সময়, স্থান, অবস্থান ও তার ইচ্ছে অনুযায়ী বিভিন্ন ক্ষেত্রে শ্রম দিয়ে জন্মগত জ্ঞানকে বর্ধিত করে। আর তাই একেক দিকে একেক জন একেক বিষয় ভালো জানে কিন্তু তা বলে কেউ কম জ্ঞানী আবার কেউ বেশি জ্ঞানী বলা সমাচীন হবে না।
একজন সারাজীবন চিকিৎসা ক্ষেত্রে সময় ও শ্রম দিয়ে ঐ ক্ষেত্রে তার জ্ঞানকে বর্ধিত করেছে আবার আরেকজন প্রকৌশলী ক্ষেত্রে শ্রম ও সময় দিয়ে তার জ্ঞানকে ঐ ক্ষেত্রে বর্ধিত করেছ। এখন আমরা কি বলতে পারি একজন ডাক্তার একজন প্রকৌশলী থেকে বেশি বা কম জ্ঞানী? বলতে পারি না কারণ জ্ঞানের ক্ষেত্র বা আপেক্ষিকতা ভিন্ন। তাই আমরা দুজনের জ্ঞানের তুলনা করতে পারি না। আবার শুধু দুইজন ডাক্তারে জ্ঞানের মাঝেও তুলনা করতে পারি না কারণ এক ডাক্তার হয়তো চিকিৎসা শাস্ত্রে কোন নির্দিষ্ট বিষয় ভালো জানে আর অন্য জন হয়তো অন্য আরেক টা বিষয় সম্পর্কে ভালো জানে।
আমরা যে বলি সে একটা বোকা বা তিনি একজন বুদ্ধিমান বা বুদ্ধিমতী সেটা কেন বলি? আমার মতে এভাবে শ্রেণীকরণ করা ঠিক না কারন আমরা নিজেরাই এমন অনেক দেখেছি যে ছোটবেলা যাকে বোকা হাবাগোবা বলা হয়েছে বড় হয়ে সে একসময় দেশের কোন শীর্ষ সম্মানীয় পদে কাজ করে শুধ দেশে নয় বিদেশেও বড় কোন মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানীর বড় কোন পদে কাজ করার উদাহরনও আছে। আবার আমরা সে সাপেক্ষে একজন কে বোকা বলি সে হয়তো অন্য বিষয় ভালো তাই কোন মানুষ কে অন্য মানুষের জ্ঞানের সাথে তুলনা করা বা আমি তোমার থেকে বেশি বুদ্ধিমান, তুমি আমার থেকে বোকা বলা সমাচীন না ।
পৃথিবীতে সবাই জ্ঞানী, হয়তো কোন একটা বিষয় সাপেক্ষে একজন কম জানে আরেক জুন বেশি জানে কিন্তু একজন বেশি জ্ঞানী আরেকজন বোকা বলা ঠিকা না।
একজন কম জানবে একজন বেশি জানবে আবার কেউ জেনে ভুলে যাবে এইটা একজনকে বিচার করার জন্য তেমন কোন বিষয় নয়। বিষয় হল সে জানার পর কোন সাপেক্ষে কথা বলছে। তাই যদি শ্রেনীকরন করতে হয় তাহলে আপেক্ষিকতা অনুযায়ী মানে একজন কোন সাপেক্ষে কথা বলছেন সে অনুযায়ী মানুষকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়
এক নাম্বার - যারা আপেক্ষিকতা বুঝে এবং সেই সাপেক্ষেই কথা বলে বা কাজ করে তারা হল নিরপেক্ষ জ্ঞানী বা প্রকৃত জ্ঞানী।
এই শ্রেনীর লোক কম কারণ আপেক্ষিকতা বুঝে যা বলার জন্য অর্জিত জ্ঞানের সাথে সাথে তাদের জন্য বা তাদের দ্বারা কোন সমস্যা তৈরি হয়না তারা পৃথিবী সমস্যা সমাধানে কাজ করে।
দুই নাম্বার হল- যারা আপেক্ষিকতা বুঝেও নিজের বা নিজের মতবাদ বা নিজের দলের সাপেক্ষে কথা বলে তারা হলো দলীয় জ্ঞানী।
এই শ্রেনী সংখ্যা বেশি তারাও সমস্যা সমাধানে কাজ করে তবে যা নিয়ে কাজ করে তা হয়তো সমাধান হয় কিন্তু ঐ কাজের ফলে নতুন আরেকটি সমস্যা সৃষ্টি হয়
তিন নাম্বার - যারা একেবারে আপেক্ষিকতা না বুঝে কথা বলে তারা হল অবুঝ জ্ঞানী।
বলা যায় এই শ্রেনীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এরা কাজ বা কথা বলে এক নাম্বার ও দুই নাম্বার শ্রেনীর কথা অনুযায়ী।
আমরা যদি একটু লক্ষ্য করি তাহলে আমাদের মাঝে এই তিন শ্রেনীর মানুষ সব সময়ই দেখতে পায়। তারপরও আমি এই সহজ উদাহরন দিতে পারিঃ ধরা যাক কেউ কোন একটা সার্ভিস বাজারে নতুন নিয়ে আসলো অথবা নতুন একটা জিনিস আবিষ্কার করল তখন যারা এই জিনিসটার সাথে সম্পৃক্ত তারা বলবে যে এটাই বাজারের সেরা যা মানুষের জন্য খুবই দরকার।
আর যারা এই নতুন জিনিসটার বা সার্ভিসটার কম্পিটিটর তারা মনে করে যে এটা কোন জিনিসই না এইটা মানুষের কোন কাজে লাগবে না বরং তারা তাদের কাছে সম-পর্যায়ে যে জিনিস আছে সেটাকেই বাজারের সেরা বলবে।
সমাজে কিছু লোক যারা ঐ জিনিষটা সম্পর্কে এক্সপার্ট এবং এর আগেও এরকম নতুন জিনিস ইউজ করেছে তারা দুই দিক থেকে একটা বিশ্লেষণ করে বলবে যে নুতন জিনিষটার ভিতরে এই ফিচারগুলো খুবই ভাল হয়েছে যা মানুষের জন্য সমাজের জন্য খুব উপকার হবে আর কিছু কিছু ফিচার আছে যেগুলো ভালো হয় নাই বা মানুষের জন্য তেমন ভাল কিছু নিয়ে আসবেন।
আর যারা এই জিনিষটার সাধারন ইউজার তারা হয়তো নতুন জিনিসটার কথা বলবে অথবা আগে যে জিনিসটা ইউজ করত সেটা সম্পর্কে মন্তব্য করবে। আর যারা নতুন জিনিস ইউজ করে নেই বা জিনিসটা সম্পর্কে জানেনা তারা হয়তো বলবে জিনিসটা খুবই ভালো অথবা জিনিসটা খুবই খারাপ।
সুতরাং এখানে ঘটনা কিন্তু একটা যা নতুন একটা আবিষ্কার বা নতুন একটা সার্ভিস সেটা যাই হোক এটা সম্পর্কে বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন চিন্তা।
যারা এক্সপার্ট ইউজার যারা নতুন জিনিসটা ইউজ করছে আবার পুরাতন জিনিসগুলোও ইউজ করেছে এবং সেই সাপেক্ষে কথা বলেছে তারা হল নিরপেক্ষ জ্ঞানী কারণ তারা আপেক্ষিকতা বুঝে কথা বলেছে।
যারা এই জিনিসটা তৈরি করল আর যারা এ কম্পিটিউটর তারা হল দলীয় জ্ঞানী কারণ তারা আপেক্ষিকতা বোঝার পরেও তার প্রোডাক্ট বা সার্ভিসটা কে বাজারের অন্য সব থেকে থেকে সবার উপরে রাখতে চায়।
আর বাকি যারা সবাই অবুঝ জ্ঞানী।
এই উদাহরণটা হলো নতুন জিনিস কোন মানুষ কতটা গ্রহণ করতে পারে তার আপেক্ষিকতা। এভাবে পৃথিবীতে যত ঘটনা ঘটে প্রত্যেক ঘটনার ক্ষেত্রেই এই তিন ধরনের লোক দেখা যায়।