Learn more
আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা নিয়ে আমি অনেকদিন ধরে ভাবছি আর মনে হচ্ছে যে আমরা যদি এই আপেক্ষিকতা জিনিসটা বুঝি তাহলে অনেক ক্ষেত্রে আমাদের অন্যের প্রতি বিরোধ বা দ্বন্দ্ব থাকবে না আর দ্বন্দ্ব যত কম থাকবে মনে দুঃখ তত কম হবে। তাই "আপেক্ষিকতা ও আমি" এই নিয়ে পর্ব আকারে কিছু লেখার চেষ্টা করতেছি যার প্রথম পর্ব হলো: আপেক্ষিকতার ভাবার্থ ।
আপেক্ষিকতা শব্দটি আসছে ইংরেজি শব্দ relativity থেকে যা আপেক্ষিকতা তত্ত্ব (Theory of relativity) হিসাবে পদার্থবিজ্ঞানের একটি শাখায় চিরায়ত বলবিদ্যা বেশি ব্যবহার করা হয় এবং যারা এই বিষয়ে উচ্চতর পড়াশোনা করে তারাই এটি ভালোভাবে বুঝে বা তাদেরই বুঝার দরকার হয় । কিন্তু মানুষের মনে কিভাবে এই আপেক্ষিকতা কাজ করে আর মানুষের জীবনে এর কি ধরনের প্রভাব ফেলে তা নিয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করবো। তার আগে আপেক্ষিকতা শব্দটির ভাবার্থটা বুঝে নেওয়া যাক কিছু উদাহরনের মাধ্যমে।
আপেক্ষিকতা শব্দটি বিশেষণ পদ আপেক্ষিক শব্দ থেকে আসছে যার মানে কোনো কিছুর সাপেক্ষে তুলনা করা। অমুক তমুক এর থেকে ভালো, এই খাবার টা ওই খাবারের থেকে ভালো। এই মহাবিশ্বে সব কিছুই একে অপরের সঙ্গে তুলনীয়।
উদাহরণস্বরুপ, আপনে ঘরে বসে আছেন এবং আপনাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় আপনি কি স্থির? আপনি বলবেন হ্যা। এইটা আপনার জন্য সঠিক উত্তর যে আপনি স্থির কিন্তু পৃথিবীর সাপেক্ষে আপনি স্থির না। পৃথিবী আপনাকে নিয়ে অনবরত নিজ অক্ষে আর সূর্যের চারদিকে ঘুরছে!!! সে হিসেবে আপনি স্থির থাকা দূরের কথা স্থির বলতে বিশ্বের কোন কিচ্ছু নেই। কিন্তু যখন আপেক্ষিকতা টেনে আনবেন তখন আপনে স্থির । আপনি আপনার ঘরের দেয়ালের সাপেক্ষে স্থির, দেয়াল আপনার সাপেক্ষে স্থির ইত্যাদি।
আবার, আপনে এখন একটা চলন্ত গাড়িতে বসে আছেন। এখন আপনি কি স্থির? আপনি স্থির গাড়ির সাপেক্ষে কিন্তু স্থানের সাপেক্ষে আপনি ও গাড়িটি স্থির না।
অর্থাৎ কোনো কিছুর সাথে তুলনা করে তার বর্তমান সঠিক অবস্থা বা পরিবর্তিত অবস্থা প্রকাশ করার জন্যই আপেক্ষিকতার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।
চিরায়ত বলবিদ্যা অণুযায়ী স্থান, কাল এবং ভরকে পরম বলে ধরা হয়। কিন্তু আলবার্ট আইনস্টাইন সর্বপ্রথম দাবী করেন যে পরমস্থান, পরমকাল এবং পরমভর বলতে কিছুই নেই। স্থান, কাল এবং ভর তিনটিকেই আপেক্ষিক ধরেই আমরা সব কিছু বিবেচনা করি। শুথু পৃথিবী না পৃথিবীর বাহিরেও সব কিছু, কিছু না কিছুর সাপক্ষে চলে। মোটকথা, সব জায়গা তেই আপেক্ষিকতা।
পদার্থবিদ্যার কঠিন একটি বিষয় আপেক্ষিকতা নিয়ে আমার কথা বলার মুল উদেশ্য না। আমার উদেশ্য হল - মানুষের চিন্তা চেতনাও এই আপেক্ষিকতার বাহিরে না। আমরা যে যাই চিন্তা করি বা যাই বলি সব কিছুই কোন কিছু সাপেক্ষে বলি বা করি। অর্থাৎ মানুষের চিন্তা ভাবনাও আপেক্ষিক।
আইনস্টাইনের কাছে একবার আপেক্ষিকতার সহজ ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হলো। উত্তরে আইনস্টাইন বললেন, ‘আপনার হাত একটা জ্বলন্ত চুল্লীর উপর ধরে রাখুন, মনে হবে এক ঘন্টা পার হয়ে গেছে। কিন্তু একজন সুন্দরী মেয়ের পাশে একঘন্টা বসে থাকুন, আপনার কাছে মনে হবে মাত্র এক মিনিট পার হলো, এটাই আপেক্ষিকতা।’ এখানেও কিন্থু মানুষের মনের অবস্থা দিয়ে আইনস্টাইন পদার্থবিদ্যার কঠিন বিষয়টি বুঝাইছে। আর আমার সম্পুর্ন লেখাটাই হবে আমাদের মনের চিন্তা ভাবনা কিভাবে আপেক্ষিক হয়।
আমরা যখন ই কোনো চিন্তা করি বা কথা বলি তা কোন কিছু সাপেক্ষে বলি। আর এই জন্যই প্রত্যেক ঘটনা ই একেক জনের কাছে একেক রকম কারণ প্রতেকেই প্রতেকের অবস্থান সাপেক্ষে চিন্তা করে।
যেমন আমি সাইন্স থেকে আসা একজন টেকনোলজি নিয়ে কাজ করি তাই আমি যখন কথা বলি বা চিন্তা করি তখন সব কিছু টেকনোলজি বা সাইন্স এর সাপেক্ষে ই বলি বা চিন্তা করি। আবার কেউ যখন বিজনেস থেকে আসে সে তখন বিজনেস এর সাপেক্ষে কথা বলে বা চিন্তা করে।
অন্যদিকে আমরা সমাজে যারা নিম্ন শ্রেনীর মানুষ তারা উপর শ্রেনীর মানুষের প্রতি এক রকম চিন্তাভাবনা আবার উপর শ্রেনীর মানুষ আমাদের নিম্ন শ্রেনীর মানুষের প্রতি আরেক ধরনের চিন্তাভাবনা। আর এই চিন্তা, সমাজ থেকে শুরু করে দেশ, মহাদেশ এমন কি মহাবিশ্ব পর্যন্ত । যেমন আমরা যারা বাংলাদেশি তাহারা ভারত বা পাকিস্তান সম্পর্কে কে এক রকম চিন্তা করি আবার ভারত বা পাকিস্তান আমাদের সম্পর্কে অন্য ধারনের চিন্তা করে । আবার এশিয়া তে যারা আছি তাহারা ইউরুপ আমেরিকা সম্পর্কে এক ধরনের চিন্তা করি অন্যদিকে ইউরুপ আমেরিকা আমাদের সম্পর্কে অন্য ধরনের চিন্তা করে। এই চিন্তাভাবনার মুলে হল আপেক্ষিকতা।
এখানে সঠিক-বেঠিক এর আগে আসে আপেক্ষিকতা কারন সঠিক-বেঠিক টা হয়ই কোন কিছুর সাপেক্ষে । আর এই জন্য একই ঘটনা এক জনের জন্য ঠিক আবার আরেক জনের জন্য বেঠিক।
১। ডিসকভারিতে বাঘ যখন হরিণকে শিকার জন্য দোড়ায় আমরা তখন হরিনের পক্ষে থাকি আর বলতে থাকি আরও জোরে আরও জোরে আর যখন বাঘ হরিটাকে ধরে ফেলে তখন মনে করি বাঘ টি কত নিষ্ঠূর! আবার সেই আমি হাঁস মুরগি গরু মহিষ এমনকি সেই হরিনটিকেও যখন জবাই করে মজা করে খাই কখনো কি নিজেকে নিষ্ঠূর মনে হয়?
২। দৈনন্দিন জীবনে বাস্তব একটা বিষয় - তা হল গাড়িতে লোক ওঠা নিয়ে আমার নিজের আপেক্ষিকতা। আমি গুলিস্তান থেকে মিরপুরের বাসে ওঠলে রাস্তার মাঝে শাহবাগ বা ধানমন্ডি থেকে কোন লোক ওঠালে আমি মনে করি এইটা ঠিক না যেহেতু ডারেক্ট ভাড়া নিচ্ছে। আবার সেই আমি যদি শাহবাগ বা ধানমন্ডি থাকি তখন ভাবি একটু নিয়ে যাইলে কি সম্যাসা বাসে ত সীট খালিই আছে। একই ঘটনার অবস্থান সাপেক্ষে ভিন্ন চিন্তা। অর্থাৎ সব জায়গা তেই আপেক্ষিকতা।
আমি আশা করি আপেক্ষিকতা জিনিসটা কি মোটামোটি আমরা বুঝতে পারছি আর এই আপেক্ষিকতা মানুষের জীবনে বা সমাজের কিভাবে প্রভাব ফেলে এবং আপেক্ষিকতা বুঝলে আপনার ও আমার জীবন কিভাবে অনেক কিছুই পজিটিভ হয়ে যাবে, জীবন হবে আরও সন্দুরময় এই নিয়ে আমি আরো কিছু পর্ব আকারে নিয়ে আসবো।
এরপরও আপেক্ষিকতা না বুঝলে আমি শেষ একটি কথা বলি, দেখেন এর দ্বারা আপেক্ষিকতা বুঝে আসে কিনা?
আপেক্ষিকতা জিনিসটা কি এই অনেক উদাহরন দিয়ে আমি অনেক ভালো একটা পোস্ট করলাম কিন্তু সবাই লাইক দিবে না কারন যা আমার কাছে অনেক ভালো হয়েছে মনে করছি তা অন্যের কাছে মোটামোটি ভালো হয়েছে এমনকি কিছুই হয় নাই মনে হতে পারে। আর সেটাই আপেক্ষিকতা।