Learn more
প্রতি বছর ২৮শে জুন স্যোসাল বিসিনেস ডে হিসাবে পালন হয়। এই দিনে স্যোসাল বিসিনেসের মাধ্যমে বিশ্বকে কিভাবে মানুষের উপযোগী করা যায়, বিশ্বের কোথায় কোথায়, কি কি নিয়ে স্যোসাল বিসিনেস হচ্ছে, স্যোসাল বিসিনেস দিয়ে আর কি করা যায়, এসব নিয়ে ২-৩ দিন ধরে আলোচনা সহ বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম হয়।
স্যোসাল বিসিনেস ডে হল একটা ইদের মত। ইদ যেমন প্রতি বছর নতুন করে আনন্দ দেয়, স্যোসাল বিসিনেস ডেও তেমনি স্যোসাল বিসিনেস যারা করে, করতে চায় সেই পরিবারের সবাইকে এক সাথে করে, সবার মাঝে নতুন করে কিছু করার নতুন একটা আগ্রহ তৈরি করে। আর সেই নতুন কিছুটা নিজের জন্য যেমন ভালো, সমাজ, দেশ তথা পৃথিবীর জন্যও ভালো।
তথাকথিত বিসিনেসের সাথে স্যোসাল বিসিনেসর এইটাই হল বড় প্রার্থক্য। তথাকথিত বিসিনেস একটা সমস্যার সমাধান করলে অন্য আরেকটি সমস্যা তৈরি করে কিন্তু স্যোসাল বিসিনেস এমনভাবে সমাজের সমস্যার সমাধানের মাধ্যমে ব্যবসা করে যেখানে অন্য নতুন কোন সমস্যা তৈরি হয় না। যেমন তথাকথিত বিসিনেসের বড় এক সমস্যা হল সম্পদকে এককেন্দ্রিক করা। কিন্তু স্যোসাল বিসিনেসের মুল বিষয় হল: ব্যবসায় যে লাভ করা হয় সেই লাভটা একজনের না হয়ে, ব্যবসায় আবার নিয়োগ করা অথবা সমাজের অন্য কোন সমস্যা সমাধানে ব্যয় করা।
স্যোসাল বিসিনেস ডেতে প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ৭০০-১০০০ লোক জড়ো হয় এবং এই প্রোগ্রামটি বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হয়। একজনের একটা ফিলোসোফির উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের বাহিরে কোন একটি দেশে সারা বিশ্ব থেকে হাই ডেজিগনেশনের এক হাজার লোক, দু-তিন দিনের জন্য এক সাথে জড়ো করা মোটেই সহজ বিষয় না। অনেক বিষয় নিয়ে অনেক কনফারেন্স, সিম্পোজিয়ামে বিশ্ব থেকে হাজার লোক জড়ো কিন্তু একক কোন ব্যাক্তির ফিলোসোফির ভিত্তিতে এরকম লোক জড়ো হওয়া বিশ্বে বিরল। আমরা সবাই জানি সেই ব্যক্তিটি হলেন আমাদের ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস আর ফিলোসোফিটি হল স্যোসাল বিসিনেস বা সামাজিক ব্যবসা।
এই বছর ২৮ই জুন ইদ থাকাতে জুলাই ২৭,২৮ এবং ২৯ তারিখে মালেসিয়ার লংকাওয়েতে হচ্ছে স্যোসাল বিসিনেস ডে যেখানে এবছর ৩১টি দেশ থেকে ৬০০ এর বেশি লোক জড়ো হচ্ছে। এই বছরের স্যোসাল বিসিনেস ডের প্রতিপাদ্য বিষয় হল: War, Peace and Economics: Future of Human Beings(যুদ্ধ, শান্তি এবং অর্থনীতি: মানুষের ভবিষ্যত ) যার মুল মেসেজ হল: মানব সভ্যতা রক্ষা করতে নতুন সভ্যতা গড়ে তুলতে হবে। নতুন সভ্যতা গড়ে তুলা ছাড়া পৃথিবীতে মানুষ ও মানুষের মাঝে শান্তির থাকার সুযোগ নেই। নতুন সভ্যতার কেন্দ্রবিন্দু হবে শান্তি। যুদ্ধ, সব ধরনের আন্তর্জাতিক সহিংসতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন নির্মূল করার হবে নতুন সভ্যতার মুল ভিত্তি ।
যে মানুষটির কথা শুনতে, পৃথিবীর পরিবর্তনে এগিয়ে আসতে এক সাথে এত মানুষ জড়ো হয়, উনাকে নিয়ে নতুন কিছু বলা দরকার মনে করি না। সারা বিশ্বে যারা ঘুরে, তারাই বলতে পারবে ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস কতটা পরিচিত বিশ্বের কাছে। বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে পরিচিত করার ক্ষেত্রে আমার মতে তিনটি বিষয় আছে, যেখানে এক নাম্বারটি ক্রিকেট খেলা, দ্বিতীয়টি হল বাংলাদেশের জনসংখ্যা সম্পদ যারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করে এবং তৃতীয়টি হল ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস। ৭ জন মাত্র ব্যাক্তি আছেন যারা একসাথে নোবেল, আমেরিকার প্রেসিডেন্সিয়াল এওয়ার্ড এবং কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল এই তিনটি পুরষ্কার পেয়েছেন তার মধ্যে সপ্তম ব্যক্তিটি হচ্ছেন আমাদের ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস! Fortune Magazine এ সারা বিশ্বের টপ ১২জন উদ্যোক্তার লিস্ট তৈরি করেছেন, যার মধ্যে একজন হলেন আমাদের ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস।
আমাদের দেশের অনেকের প্রশ্ন, বাংলাদেশের জন্য ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস কি করেছেন? এই প্রশ্নের জবাব দেওয়াটা আমার মনে হয় অপ্রয়োজনীয়। তারপরও আমি আমার ক্ষুদ্র চিন্তায় যেটা দেখি সেটা হল: গ্রামীণ ব্যাংকসহ গ্রামীনের অসংখ্য প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত করেছেন ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস। এসব প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার লোক কাজ করছে। এই হাজার হাজার লোকের পিছনে অসংখ্য পরিবার নির্ভরশীল।
আমার মনে হয় যারা নিজের জন্য, নিজের সমাজের জন্য ভালো কিছু করতে চায়, যারা সুন্দর একটা সমাজ চিন্তা করে যেখানে থাকবে না মারামারি, হানাহানি, থাকবে না লোভ-লালশা আর থাকবে না দুর্নীতি, তারা স্যোসাল বিসিনেস এবং প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনুস স্যারকে নিয়ে পড়াশোনা করতে পারেন। ধন্যবাদ।