Learn more
সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার পেশায় কাজ করার ফলে বিভিন্ন সময়ে অন্যান্য পেশার কাজের জন্য সিস্টেম তৈরি কাজ করছি। আর সেই কাজ করতে গিয়ে জানা হয়েছে অন্যান্য পেশার কাজের ধরন, কাজের আউটপুট, কাদের সাথে তাদের কাজ করতে হয়, কিভাবে কাজ করে, কাজ ও ব্যবসার মূল প্রক্রিয়া কি, কিভাবে সেলস ও মার্কেটিং হয়, কিভাবে একটি প্রতিষ্ঠানের রিটার্ন অফ ইনভেস্টমেন্ড হয় ইত্যাদি ইত্যাদি। আর সাথে সাথে জানতে হয়েছে অন্যান্য পেশার বিভিন্ন ডোমেইন সম্পর্কে বিস্তারিত। টেকনোলজি এরিয়া ছাড়া অন্যান্য সেসব ডোমেইন এ আমার অভিজ্ঞতা হয়েছে:
ডিজিটাল মার্কেটিং এবং ব্র্যান্ডিং
হাসপাতাল ম্যানেজমেন্ট
এইচআরএম এবং অফিস প্রশাসনিক
হিসাব ও অর্থ
সামাজিক ব্যবসা
ক্ষুদ্রঋণ - MFI
উদ্যোক্তা ব্যবসা বা স্টার্টআপ
ই-কমার্স
ইনভেন্টরি এবং প্রকিউরমেন্ট
এন্টারপ্রাইজ সলিউশন
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট
সাপোর্ট এবং হেল্পডেস্ক
প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট
ইউনিভার্সিটি থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত কিভাবে আমার এই অভিজ্ঞতা হয়েছে এবং হচ্ছে তার একটা বিশ্লেষণ হলঃ
ইউনিভার্সিটিতে থাকাকালীন যখন দেখলাম আমাদের প্রত্যেক বিষয়ে বিভিন্ন ধরেনের নাম্বার থাকে এবং সেই নাম্বার আবার চূড়ান্ত পরীক্ষার পর এক সাথে করে সিজিপি করে আমাদের ফলাফল দিত। এই নাম্বার বিভক্তিকরণ, নাম্বার এন্ট্রি এবং অটোম্যাটিক সিজিপি তৈরি করা নিয়ে স্টোডেন্ট রেজাল্ট নামে একটা সফটওয়ার তৈরি করি ইউনিভার্সিটি পড়ার সময়। তারপর ইউনিভার্সিটির শেষ বছরে অই সময়(২০০৭) এ তেমন ভালো গাইড না পাওয়ায় নিজের থেকে ইউনিভার্সিটির কোর্স হিসেবে প্রোজেক্ট নিয়েছিলাম লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম। প্রজেক্টটি ছোট ছিলো কিন্তু সেটাই ছিলো প্রথম যে কোন সিস্টেম কিভাবে কাজ করে তার এ টু জেট ধারণা নেওয়া। আর এই ধারণা থেকেই পরিবর্তিতে একটা স্কুল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম নিয়ে কাজ করি যেখানে ছিল - স্টোডেন্ট ইনফরমেশন, শিক্ষক/কর্মচারী ম্যানেজমেন্ট, বিভাগ, নীতি, কোর্সের সময়সূচী, ভর্তি, ফি সংগ্রহ, সিজিপি টূ রেজাল্ট। এই তিনটি প্রজেক্ট থেকে ইন্সটিটিউট ম্যানেজমেন্ট নিয়ে ভালোই ধারণা হয় এবং সাথে সাথে একটি শিক্ষা প্রতিষ্টান ও প্রতিষ্টানে কর্মরত সবার দৈনন্দিন কাজের ভালো একটা ধারনা হয়।
তারপর ছোট একটা সফটওয়ার কোম্পানিতে জয়েন দেই ২০০৮ এর প্রথম দিকে যারা তখন শুধু ওয়েবসাইট নিয়ে কাজ করত। একটা কোম্পানির বা এক জন মানুষ নিজের ব্রান্ডিং এর করে অন্যের কাছে কোম্পানি বা নিজেকে প্রেজেন্ট করে তা একটা ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে কাজ করে। ওয়েবসাইট হল এখন যেকোন কিছুর একটা আইডেন্টিটি।
এরপরে ক্যানাডার একটা ই-কমার্সের কাজ শুরু করে আজ পর্যন্ত অনেক ই-কমার্স সাইটে কাজ করে কিভাবে প্রোডাক্ট সেইল করে, অর্ডার প্রসেস করে, জানতে পেরেছি । আর এই ই-কর্মাস সাইটের গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ হল পেমেন্ট গেইটওয়ে। আজ পর্যন্ত আমি বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া, থাইল্যান্ড সহ অনেক দেশের পেমেন্ট গেইটওয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পেরেছি। সেগুলোর মাঝে উল্লেখযোগ্য হল paypal, ssl commerce, SureCash, Portwallet etc
ওয়েবসাইট এবং ই-কমার্স সাইট তৈরি করে সেটা মানুষের মাঝে পৌঁছাতে দরকার হয় এসইও, ইমেইল মার্কেটিং এবং স্যোসাল মিডিয়া মার্কেটিং ইত্যাদি।
২০১০ থেকে ২০১২ সালে আগের খেলার ডাটা থেকে প্রিডিকশন করার মত ডাটা তৈরির করার জন্য একটা কাজ করি intelligentbettingtips.com - predictions, European and international football tips etc. সেই সময় নিজে নিজে আল্গরিথম করে ডাটা প্রিডিকশনের কাজ করেছি, এখন যে কাজের জন্য বিভিন্ন টুলস ও লাইব্রেরি আছে। এখন এসব টুলস ও লাইব্রেরি দিয়ে এইধরনের প্রিডিকশনের কাজ করা খুবই সহজ হয়ে গেছে। তবে আমি যখন কাজ করছি, তখন আজকের লাইব্রেরি ভিতরে কি কাজ করে তা নিয়ে অনেক চিন্তা করার সুযোগ হয়েছিলো।
২০১৩ সাল থেকে গ্রামীণ সলিউশন এ কাজ শুরু করি আর সেখানে আমার নেওয়া হয়েছে মোহাম্মদ ইউনুস স্যারের বর্তমানের প্রধান ফিলোসোফি সোস্যাল বিসিনেস এর জন্য একটা ওয়েব পোর্টাল তৈরি করা যেখানে সারা বিশ্বে সোস্যাল বিসিনেস নিয়ে যা হয়েছে, যা হচ্ছে আর যা হবে সব থাকবে। সেটা নিয়ে পরে বলছি। গ্রামীণ সলিউশন থাকাকালীন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল(সিএমএইচ) প্রোজেক্টে কাজ করি। সেটা ছিলো সিএমএইচ অটোমেশন। সেখানে আমি বেশি কাজ করি নাই, তবে সেই SRS পড়ে মোটামুটি একটা সরকারি হাসপাতালের কার্যক্রম সম্পর্কে ভালো ধারণা হয়েছে।
বাংলাদেশ মিউনিসিপল ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (বিএমডিএফ) হল অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে গঠিত একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান যার প্রধান কাজ হল বৈধ উৎস( যেমন বিশ্বব্যাংক) হতে ঋণ, সাহায্য, দান বা অনুদান সংগ্রহ বা গ্রহণপূর্বক উক্ত তহবিল গঠন ও এর সক্ষমতা অর্জনের নিমিত্ত সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাসমূহকে অর্থায়ন করা। এই বিএমডিএফ ফান্ড এবং সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাসমূহকে অর্থায়ন করা নিয়ে একটা সিস্টেম এ কাজ করি। এতে জানলাম অর্থ তহবিল নিয়ে প্রজেক্ট ও প্রোগ্রাম মেনেজমেন্ট, লোন প্রোপোজাল, এপ্লিকেশন সাবমিশন, এনালাইসিস, সিলেকশন, লোন ডিসবার্সডমেন্ট সিডিউল, লোন ডিসবার্সডমেন্ট ইত্যাদি।
এবার আসি সোস্যাল বিসিনেস পোর্টাল করতে গিয়ে আমি কি শিখলাম। এখানে বিভিন্ন বিসিনেস সম্পর্কে, বিভিন্ন স্টার্টআপ নিয়ে ভালো ধারণা হল। দেশি বিদেশী ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট নিয়ে হল বাস্তব ধারণা। আর একাডেমিশিয়ানরা কিভাবে কাজ করে, একটা বিষয় নিয়ে কিভাবে গবেষণা হয়, কনফারেন্স কিভাবে হয় এখানে কি করে, কারা কারা জয়েন করে, তা নিয়ে বড় ধরনে ধারণা হয়েছে। আর এই ধারণা থেকে আমি দুইটা পেপার লেখা ও সাপমিট করার সাহসও পেয়েছি। আমার জীবনে বড় প্রজেক্টের মধ্যে অন্যতম একটি প্রজেক্ট হল সোস্যাল বিসিনেস পোর্টাল
রাড্ডা হল একটা ফাউন্ডেশন বিত্তিক হেলথ সেন্টার মা ও শিশু ও বিভিন্ন ভ্যাক্সিন নিয়ে কাজ করে। তাদের জন্য একটা সিস্টেম করি যেখানে পেশেন্ট রেজিষ্ট্রেশন থেকে শুরু করে ট্রিটমেন্ট নেওয়া, ভ্যাক্সিনেশন নেওয়া, ভ্যাক্সিন এর সিডিউল এবং সিডিউল অনুযায়ী রিমাইন্ডার দেওয়া, ওষুধের ইনভেন্টরি, টুটাল একাউন্টিং নিয়ে কাজ করা হয়। আর এর থেকে রাড্ডার মত ফাউন্ডেশন ধরনের প্রতিষ্ঠান গুলো কি করে, কিভাবে করে তার সামগ্রিক একটা ধারণা হয়েছে।
গ্রামীণ শিক্ষার জন্য শিক্ষা বৃত্তি নিয়ে একটা প্রোজেক্ট করি সেখানে বৃত্তির জন্য ছাত্র থেকে এপ্লিকেশন গ্রহন, যাচাই, এভপ্রোভাল, মাসিক টাকা ব্যাংকে পাটানো। এবং কোথাও থেকে কত টাকা আসছে সে হিসেব করা হয়।
তারপর গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টের কন্সট্রাকশন প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট এর কাজ করে জানলাম কিভাবে একটা প্রোজেক্ট শুরু করে ফিনিশিং দেয়। সেখানে ছিলো কন্সট্রাকশন এর সাপ্লাই চেইন- বিওকিও, রিকোইজেশন, টেন্ডার, সিএস, প্রোকিউরম্যান্ট, এলসি, ইনভ্যান্টরি ইত্যাদি।
বর্তমানের আবার হেলথসিস্টেম নিয়ে কাজ করছি। শুধু হেলথসিস্টেম না এইটা হল গ্রামীণ কল্যাণের কমিউনিটি বৃত্তিক সারাদেশের উপজেলা পর্যায়ে অনেক সেন্টার আছে যারা মিনি হসপিটাল হিসাবে কাজ করে। আবার তাদের সেন্টার বৃত্তিক হেলথ এসিস্ট্যান্ট আছে যারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে হেলথকেয়ার এর কাজ করে। আর সারা মাস জুরে কেম্পেইন প্রোগ্রাম করে থাকে। গ্রামীণ কল্যাণের হেড অফিস থেকে শুরু করে রিজিওনাল অফিস,হেলথসেন্টার, হেলথ এসিস্ট্যান্ট এবং পেশেন্ট ম্যানেজমেন্ট সহ সব অটোমেশন এর জন্য সিস্টেম তৈরির কাজ করছি।
ক্যানাডার একটা এইচ আর এবং পেরুল প্রোজেক্টে সিস্টেম এনাসিস্ট হিসাবে কাজ করে এইচ আর ও পেরোল সম্পর্কে অনেক কিছু যেমন: Employee Information Management, Attendance, TimeSheet, Payroll Processing, T4 /RL1/T4A slips, Labour Code, Vacation Plan, Tax Calculation, Deductions, Benefits, Accruals etc.
গ্রামীণ ডিস্ট্রিবিউশন এর মোবাইল এসেম্বলি অটোমেশন এর জন্য কাজ করতেছি। কিছু দিন আগে ফ্যাক্টরি পরিদর্শন করে জানলাম র-মেটেরিয়াল থেকে ফিনিসড প্রোডাক্ট কিভাবে কাজ করে তার সম্পুর্ন প্রোডাকশন সাইকেল। সেখানে দেখলাম ৭-৮ কোটি টাকার সারফেস-মাউন্ট প্রযুক্তি(SMT) যাতে বৈদ্যুতিক উপাদানগুলি একটি মুদ্রিত সার্কিট বোর্ডের পৃষ্ঠের উপরে সরাসরি মাউন্ট করা হয় যার দ্বারা মোবাইল বা যেকোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাদারবোর্ড তৈরি করা হয়।
কমিনিউকেশন্সের প্রধান প্রোডাক্ট ছিলো জিব্যাংকার যা গ্রামীন ব্যাংকসহ আর যারা মাইক্রোক্রেডিট নিয়ে কাজ করে তাদের জন্য সিস্টেম। সেইটার রিডেভেলপম্যান্ট ও টেকনোলজি আপগ্রেডেশন এর কাজ করতে গিয়ে শিখলাম মাইক্রোক্রেডিট কি, কিভাবে কাজ করে আর সেই সাথে একাউন্টিং এর বিস্তারিত ধারণা।
সাপোর্ট টিম কিভাবে কাজ করে, তাদের কেপিআই কিভাবে নির্নয় হয় সেটা নিয়ে আমার নিজের একটা অনলাইন হেল্পডেস্ক নামে সিস্টেম আছে। মিটিং ম্যানেজ, টাস্ক এবং টাইম ম্যানেজ, প্রজেক্ট ম্যানেজ করা আমাদের প্রতিদিনের কাজ যা আমার তৈরি করা একটা সিস্টেম দিয়ে হয়।
আর একটা বিষয় প্রত্যেক বড় প্রতিষ্ঠানেরই একটা বড় কাজ থাকে প্রজেক্ট ম্যানেজ করা। যেকোনো প্রজেক্ট ম্যানেজ করার ক্ষেত্রে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়াদের ভালো ধারনা থাকে কারণ তারা একটু সিনিয়র হলেই তাদেরকে প্রজেক্ট ম্যানেজ করতে হয় হতে পারে ছোট প্রজেক্ট কিন্তু এই লাইনে প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট এর বিভিন্ন মেদডোলজি সহ অনেক কিছু নিয়েই কাজ করতে হয়।
প্রতিটি শিশু এবং ব্যক্তির অধিকার রয়েছে তাদের ঈশ্বর প্রদত্ত মস্তিষ্ককে পূর্ণ সম্ভাবনায় বিকাশ করার। একটা শিশু যেভাবে কথা বলা এবং বিভিন্ন অজানা জিনিস সম্পর্কে প্রশ্নের মাধ্যমে শিখে সে অনুযায়ী একটা লার্নি সিস্টেম তৈরি কাজে যুক্ত আছি একটা প্রজেক্টে। যে প্রজেক্টের মুলে আছেন ইউসুফ মাহবুবুল ইসলাম, অধ্যাপক, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ (CSE), IUB. যিনি গবেষনা করছেন কিভাবে কন্সট্রাক্টিভিজম (গঠনবাদ) থিওরি ব্যবহার করে সেলফ লার্নি সিস্টেম তৈরি করা যায়। অর্থাৎ মানুষ কিভাবে নিজে নিজে শিখতে পারে সেই ধরনের একটা অনলাইন প্লাটফরম।
গ্রামীন ডিজিটাল হেলথ নিয়ে কাজ করছি যেখানে এপপ্স এর মাধ্যমে হবে চিকিৎসা সেবা। সেখানে আছে অডিও, ভিডিও কল ও টেক্সট চ্যাট করার মাধ্যেম ডাক্তারের প্রস্ক্রিপশন নেওয়া মূল কাজ। আরও আছে এপপ্সের মাধমে ঐউষধ কেনা এবং ডায়াগনস্টিক টেস্ট এর জন্য অর্ডার করার যাতে বাসায় গিয়ে স্যাম্পল নিয়ে টেস্ট শেষে বাসায় রিপোর্ট ডেলিভারি করতে পারে।
এই অভিজ্ঞতা চলছে এবং সামনে চলতে থাকবে।....