Learn more
যদি তুমি তরুণ হও তবে তোমাকে বলছি।
আজ তোমার হাতে আছে এক অভাবনীয় শক্তি যা দিয়ে পারো তুমি বিশ্বকে জানতে, পারো বিশ্বকে জানাতে আর সেটা হল টেকনোলজি বা প্রযুক্তি। এই শক্তি আগের দিনের তরুণদের ছিলো না। আমরাও এর তেমন ছোয়া পায়নি। তাই এইটা একটা আলেদা শক্তি যা বর্তমানে তরুণের হাতে আছে।
দ্বিতীয়ত আজ করোনায় সারা বিশ্ব স্থির। বিশ্বে এরকম স্থিরতা বিরাজ করবে সেটা কেউ কল্পনাও করতে পারে নাই। আজ বিশ্বের এই স্থিরতায় আমাদের অনেকাংশ তরুণদের তেমন কিছু করার নাই। এমন কি বাহিরে ঘুরাঘুরি করবে, বন্ধু-বান্ধব মিলে আড্ডা দিয়ে সময় পাস করবে সেই সুযোগটাও নাই। তাই তরুণদের হাতে আছে এক বিশাল মুল্যবান সম্পদ তা হল সময়।
সুতরাং আজ তরুণ যারা তাদের আছে দুইটি জিনিস ১টি হলো টেকনোলজি পাওয়ার আরেকটি হলো মহা মুল্যবান সময় নামক সুযোগ। এখন সেসব তরুণরা এই টেকনোলজি শক্তি কে ব্যবহার করে এই সময় সুযোগ টি কাজে লাগাবে সেসব তরুণরাই অন্যান্য তরুণ থেকে এগিয়ে যাবে এবং তারাই হবে ভবিষ্যৎ কর্ণধার।
করোনার জন্য সারা বিশ্ব জুড়ে যতই লকডাউন দেওয়া হোক না, যতই আমরা বলি না যে পৃথিবী আজ স্থির হয়ে আছে আসলে কিন্তু পৃথিবী স্থির না। পৃথিবী তার নিজস্ব গতিতে চলছে। কথা পুরাতন কিন্তু কঠিন বাস্তব হল সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না। লকডাউন বলে আমি তুমি ঘরে বন্দি হয়ে বসে থাকলেও পৃথিবী তার নিজের স্বভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে আর তার সাথে সাথে এগিয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর মানুষও। তাই সময় যতই খারাপ হোক আর যতই ভালো হোক সময়কে সময় মত কাজে না লাগালে নিজের সময় কখনই ভালো হবে না।
এখন তুমি কিভাবে টেকনোলজি শক্তিকে ব্যবহার করে সময় সুযোগ কে কাজে লাগবে তা নিয়ে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরলাম। অনেকভাবেই টেকনোলজি ব্যবহার করে সময়কে কাজে লাগানো যায়। তবে আমি বলবো এই সময় এমন কিছু শিখে ফেলা যা জীবনের সব ক্ষেত্রেই প্রয়োজন লাগবে। তুমি ভবিষ্যৎ এ ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার, সরকারি বেসরকারি চাকরিজীবি, ফ্রিল্যান্সার, ব্যবসায়ী, এমনকি উদ্যোগতা যাই হয় না কেন সবক্ষেত্রেই এসব বিষয় প্রয়োজন হবে এমন কিছু বিষয় শিখে ফেলা।
টেকনোলজি ব্যবহার করে কোন কিছু শিখার আগে তোমাকে দুটি বিষয় নিশ্চিত হতে হবে ১। মনস্থির করতে হবে তুমি কি টেকনোলজি শক্তি কে ব্যবহার করে সময় সুযোগ কাজে লাগাতে চাও কিনা ২। তোমাকে লেগে থাকতে হবে যতক্ষন না লক্ষে পৌছানো হয়। এই দুটি বিষয় নিশ্চিত হতে হবে যদি তুমি এই মহামারির সময় নিজের সময়কে কাজে লাগিয়ে কিছু শিখতে চাও কারন এখানে তুমি নিজেই ছাত্র আবার নিজেই শিক্ষক।
কিন্তু সবার আগে একটা প্রশ্নের সমাধান করে নিতে হবে আর তা হলঃ টেকনোলজি যেমন স্যোসাল মিডিয়া তোমার সময়কে লস্ট করেছে এবং তুমি যতই চেষ্টা কর সময়কে নষ্ট না করার। তারপরও হয়ে যাচ্ছে। টেকনোলজি ব্যবহার করার সময় তুমি সময়কে নিয়ন্ত্রন করতে পারো না। তাই প্রশ্ন আসে কিভাবে টেকনোলজি ব্যবহার করে সময়কে কাজে লাগাবো?
আমরা সাধারণত নিজের লাভটা আগে দেখি। এইটা আমাদের প্রকৃতিগত স্বভাব। সবক্ষেত্রে নিজের লাভ দেখা ঠিক না তবে টেকনোলজি ব্যবহারে ক্ষেত্রে নিজের লাভটা আগে দেখতে হবে এবং দেখতে হবে এভাবেঃ
--স্যোসাল মিডিয়া ব্যবহার করে অনেকে হাজার হাজার টাকা কামাছে আর আমি স্যোসাল মিডিয়া ব্যবহার করে সারাদিন ফান পোস্ট করছি, অন্যের পোস্টে লাইক, কমেন্ট করছি। এতে আমার কি লাভ?
--স্যোসাল মিডিয়া ব্যবহার করে নায়ক-নায়কারা বা রাজনীতিবিদরা নিজেদের ফোলায়ার বাড়াছে, নিজেদের জনপ্রিয়তা বাড়াচ্ছে, নিজেদের কাজের শেয়ার করে ভিসিটর বাড়াছে, আর আমি সেখানে লাইক, কমেন্ট করে তাদের প্রোমোট করছি এতে আমার কি লাভ?
--স্যোসাল মিডিয়া ব্যবহার করে টিভি, সংবাদ মাধ্যম, এবং সংবাদকর্মীরা তাদের ভিসিটর বাড়ানোর মাধ্যমে তাদের ইনকাম করছে আর আমরা তাদের ফলো করছি, এতে আমার কি লাভ?
স্যোসাল মিডিয়া ব্যবহার করার সময় মাথায় দুইটি প্রশ্ন ১। "আমার কি লাভ" ২। “উৎসের নির্ভরযোগ্যতা কতটা” রাখলে আমার মনে হয় আর সময় নষ্ট হবে না। যেমন তোমার ফেইসবুক ফিডে একটা নিউজ ফিড আসলো যার শিরোনামঃ “পপি আর শাকিব খানের আবার বিয়ে করছে”। এখন এখানে ক্লিক করে কিভাবে বিয়ে হল এর বিস্তারিত পড়ার আগে নিজেকে প্রশ্ন করো পপি আর শাকিব খানের আবার বিয়ের বিস্তারিত জেনে আমার কি লাভ? যদি লাভ না থাকে তাহলে ক্লিক করবো না। তারপরও যদি মনে করি নিউজটা জানলে আমার লাভ হবে তাহলে এর “উৎসের নির্ভরযোগ্যতা কতটা” এইটা দেখতে হবে। এইটি দেশের কোন নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে আসা নাকি আউল ফাউল উৎস থেকে আসা নিউজ তা নিউজফিডের শিরোনাম এর নিচে অয়েবসাইট অ্যাড্রেস দেখা বুঝা যায়। এই দুইটি বিষয় মাথায় রাখলে বাজে কোন বিষয় নিয়ে সময় নষ্ট হবে না।
টেকনোলজি ব্যবহার করে আমাদের সময় কে কাজে লাগিয়ে তিনটি বিষয় শিখে ফেলা যা জীবনের সব ক্ষেত্রেই প্রয়োজন লাগবে।
১। ইংরেজি শিখে ফেলা
বর্তমানে তুমি যাই কিছু করতে চাও না কেন এমনকি তোমার হাতে যে মোবাইল সেটটা আছে সেটাও ভালোভাবে ব্যাবহার করতে চাইলে তোমাকে এই ইংরেজি ভাষাটা জানতেই হবে। এইটা বলার আর কিছু নাই যে আজ ইংরেজি ছাড়া চাকরি, উদ্যোগতা, বা ব্যবসা কোন কিছুতে ভালো করা সম্ভব না। টেকনোলজির কারণে বিশ্ব আজ হাতের মুঠোয় কিন্তু ইংরেজি না জানলে তুমি তোমার হাতের মুঠোয় থাকা এই বিশ্বকে জানতে পারবে না এবং এর থেকে তুমি কিছুই নিতে পারবে না। বলতে পারো ইংরেজি হল টেকনোলজি দিয়ে বিশ্বকে দেখার, বিশ্ব থেকে কিছু নেওয়ার গেইট বা দরজা। আর টেকনোলজির কারণে ইংরেজি এখন অনেক সহজেই শিখা যাছে। অন লাইনে অনেক ফ্রি ভিডিও আছে। ইউটিউবে ইংরেজি শিখতে চাই লিখে সার্চ দিলে হাজার হাজার ভিডিও চলে আসে। শুধু প্রতিদিন কিছু সময় দেওয়া আর অনুশীলন করা। আবার সামান্য কিছু টাকা খরচ করলে ভালো ভালো কোর্স আছে অনলাইনে যা ঘরে বসেই শিখা যায়।
২। মার্কেটিং শিখে ফেলো
পৃথিবীতে দুইটা জিনিস সব মানুষকে শিখতে হয় এবং প্রত্যেক মানুষ তা নিজে নিজেই শিখে যায়। এক হল ভাষা আরেকটি হল মার্কেটিং। তবে কথা হল এই দুটো বিষয়ে যে যত বেশি শিখবে, যত বেশি জানবে সে তত এগিয়ে থাকবে। মার্কেটিং এর ক্ষেত্র এখন পরিবর্তন হয়ে ডিজিটালাইজ হয়ে যাচ্ছে এবং আগামী ১০ বছরে তা পুরোপুরি ডিজিটালাইজ হয়ে যাবে। তাই ডিজিটাল মার্কেটিং শিখা ভবিষ্যৎ কেরিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্বান্ত। শুধু কেরিয়ার না ব্যবসা বা উদ্যোগতা হতে হলে এই ডিজিটাল মার্কেটিং এর সম্পর্কে ভালো ধারনা থাকতে হবে। আর ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে চাইলে হাজার হাজার ফ্রি ভিডিও টিউটোরিয়াল আছে অনলাইনে। অনেক পেইড কোর্স আছে বাংলা ভাষায়।
৩। সফট স্কিল শিখে ফেলো
সফট স্কিল এমন কিছু চারিত্রিক ও ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য যা সাধারনত নিজে নিজে শিখতে হয় কিছুটা পরিবার থেকে শিখা যায় এবং সাধারনত হার্ড স্কিল এর মত যার কোন সনদ থাকে না।
হার্ড স্কিল বলতে এমন দক্ষতাকে বোঝায় যা সুনির্দিষ্ট কাজে প্রয়োগ করা যায় ও সঠিকভাবে যার মূল্যায়ন করা সম্ভব। সাধারণত টেকনিক্যাল দক্ষতাগুলো এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। যেমন: প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ লিখতে পারা। আর সফট স্কিল মানুষের এমন কিছু চারিত্রিক ও ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য, যা অন্যের সঙ্গে ভালোভাবে কাজ করতে বা মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে মানুষকে কাজ করতে শেখায়। এই দক্ষতাগুলো মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে, আস্থা বাড়াতে এবং দলগতভাবে কাজ করতে দারুণভাবে সাহায্য করে।বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠান হার্ড স্কিলের থেকে সফট স্কিেলর দিকে গুরুত্ব দিচ্ছে বেশি। সফট স্কিলের মধ্যে রয়েছে
-কমিউনিকেশন স্কিল বা যোগাযোগ দক্ষতা
-দলগত ভাবে কাজ করার দক্ষতা
-লিডারশীপ বা নেতৃত্বদানের ক্ষমতা
-সৃজনশীলতা ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা
-মানসিক চাপ নিয়ে কাজ করার ক্ষমতা
-ক্রিটিকাল থিঙ্কিং
-ইতিবাচক মনোভাব বা নিজে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা ইত্যাদি
উপরের পয়েন্টগুলো দিয়ে গুগুলে সার্চ করলে অনেক লেখা ও ভিডিও পাওয়া যায়।
আগামীরদিন হবে টেকনোলজি নির্ভর, টেকনোলজি ছাড়া কিছু করা যাবে না, চিন্তা করা যাবে না। ভবিষ্যৎ হবে আরো অনেক প্রতিযোগীতাময় কারন ভবিষ্যৎ এ অনেক কাজ যন্ত্র দিয়ে হবে, এখনি শুরু হয়ে গেছে, ভবিষ্যৎ এ মানুষ অনেক চাকরি হারাবে। তাই এখন থেকে টেকনোলজি ব্যবহারে অব্যস্ত না হলে তুমি অনেক পিছেয়ে যাবে। আমি এখানে তিনটি বিষয় বললাম যে বিষয়গুলো ভালো করে জানা থাকলে তুমি ভবিষ্যৎ এ আর যাই শিখতে যাও বা করতে যাও তা তোমার জন্য অনেক সহজ হবে আর এভাবে সবার থেকে তুমি এগিয়ে থাকবে।
আরেকটা গুরুত্বপূর্ন বিষয় হল যে বিষয় পড়াশোনা কর সেই বিষয়ের উপর প্রতিদিন অনলাইনে ব্লগ পড় এবং সেই বিষয়ের উপর ব্লগ লেখার চেষ্টা কর যা তোমার শিখাকে পরিপুর্নতা দিবে। ফ্রিতে ব্লগ লেখার অনেক সাইট আছে তুমি চাইলে https://songzog.com/knowledgebase এই লিঙ্ককে ক্লিক করে তোমার একটা অ্যাকাউন্ট করে আজই শুরু করে দিতে পার।
এখন তিনটি বিষয় ছাড়া তোমার যা যা ভালো লাগে তা লিস্ট করে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলো আগে শিখে ফেলো এই মহামারির অবসর সময়ে। তরুণ তোমার শক্তি ও সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সামনে এগিয়ে যাও।